সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
এক
গোটা ভারতের মানুষ গত কয়েক মাস ধরে ‘লক ডাউন’-এর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আর কাশ্মীর এই বিভীষিকা প্রত্যক্ষ করছে ২০১৯-এর ৫-আগস্ট থেকে। সেদিন থেকেই টানা ‘লক ডাউন’। তারই সঙ্গে চলছে Cordon and Search Operation (CASO) । ভারতীয় সেনারা একটা গোটা অঞ্চল ঘিরে ফেলে। তারপর চলে ঘরে ঘরে তল্লাসি। সেনারা যাকে খুশি তুলে নিয়ে যায়, মেয়েরা যৌন নিগ্রহের শিকার হন। সাদামাটা ভাবে এটাই Cordon and Search Operation-এর বৈশিষ্ট্য। কাশ্মীরের মানুষ এই অপারেশনের ভয়ঙ্করতা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন।
২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে জুলাই-এর মধ্যে ১৮৯টি এই অপারেশন চলে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা ঘটনার পর দক্ষিণ কাশ্মীরের জেলাগুলোতে CASO চালিয়ে কয়েকশ তরুণকে বেআইনি ভাবে আটক করা হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এই অপারেশনের খবর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর প্রথম পর্যন্ত উত্তর কাশ্মীরে বারমুলা জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখার নিকটবর্তী অঞ্চলে প্রায় ৪০০ বার CASO চালানো হয়। গান্ডেরবাল জেলায় গাঙবাল অরণ্য সংলগ্ন অঞ্চলে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত CASO চালানো হয়। অপারেশন চলাকালীন সামরিক বাহিনী চপারও ব্যবহার করে ।
২০১৯-এ জম্মু-কাশ্মীরে আশি জন সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে উনিশ জন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে মারা গেছেন। নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-পাকিস্তান সৈন্যদের গুলি বিনিময়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে সতেরো জন প্রাণ দিয়েছেন। অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা তেত্রিশ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। (সশস্ত্র অবস্থায় মারা গিয়েছেন ছয় জন।) বিস্ফোরণের ফলে তিন জনের মৃত্যু ঘটেছে। পাথরের আঘাতে এক জন এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর বন্দুকের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে এক জন প্রাণ দিয়েছেন। এই আশি জনের মধ্যে বারো জন মহিলা। এদের অধিকাংশই মারা গেছেন নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে। শিশু মৃত্যুর সংখ্যা আট।
২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ২৫ জন রাজনৈতিক কর্মীকে জন নিরাপত্তা আইনে (PSA) আটক করা হয়। বছরের শুরুতে জামাত-ই-ইসলামি ও জে-কে-এল-এফ’কে ভারত সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার ঘটনার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী অবন্তীপুরা, পামপুর ইত্যাদি অঞ্চলে তল্লাসি চালিয়ে ২ জন নাবালক সহ ৩৫ জনকে আটক করে। ৫ আগস্টের পর গোটা উপত্যকা জুড়ে কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়। বিজেপির মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি ৫ ডিসেম্বর সংসদে এক বিবৃতিতে বলেন, এই বন্দীদের মধ্যে ২৩৪ জনকে উত্তরপ্রদেশ ও ২৭ জনকে হরিয়ানা জেলে রাখা হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর এলাহাবাদের নৈনি সেন্ট্রাল জেলে জামাত-ই-ইসলামির একজন কর্মী মারা যান। জেলে কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ থাকাকালীন তার পরিবারের লোকজনদের এই বিষয়ে জানানো হয়নি। মৃত্যুর পরই তার পরিবারের লোকজনদের খবর দেওয়া হয়।
কুলগাম জেলার মতিবাগ গ্রামের বাসিন্দা পারভেজ আহমদ পালা। বয়স ৩৩। গত পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছেন। ৬ আগস্ট রাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে PSA-তে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে জেলবন্দী। আত্মীয়-স্বজন ওষুধ ও জামাকাপড় নিয়ে জেলে তার সাথে দেখা করতে গেলে দেখা করার অনুমতি পাননি। আর্থিক অনটনে তার পরিবারের পক্ষে আবার কাশ্মীর থেকে উত্তরপ্রদেশে যাওয়া সম্ভব নয়।
শ্রীনগরের ২৭ বছর বয়সী এক যুবককে PSA-তে আটক করে সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছে। ২০১৫-তে তার বাম চোখ পেলেটের আঘাতে শতকরা আশি ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে PSA-তে আগ্রা ডিস্ট্রিক্ট জেলে আটক রাখা হয়েছে। শারীরিক ভাবে অক্ষম বা ৬০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও PSA প্রয়োগ করা হয়। সংসদে সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর ৫১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশকেই সি-আর-পি-সি’র ১০৭ ও ১৫১ ধারায় আটক রাখা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে আটক করে কয়েকদিন পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বেআইনি ভাবে তাদের কয়েকদিন আটক রাখা হয়।
১৯৯০ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে কাশ্মীরে ৮০০০-এর বেশি মানুষ নিখোঁজ। ভারত সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, এরা প্রত্যেকেই পাক-কাশ্মীরে চলে গেছেন এবং সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেরই মৃতদেহ পরবর্তীতে তাদের বাসস্থানের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পাওয়া গেছে। ভারত সরকার ২০০৭ সালে International Convention for Protection of All Persons from Disappearance-এ সই করেছে। কিন্তু এখনও অনুমোদন (ratify) দেয়নি। রাজ্য মানব অধিকার কমিশনের কাছে বানিহাল ও ব্রাসবান থেকে ১৩২ জনের ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১২৯ জন ‘নিখোঁজ’ ও ৩ জন বেঁচে আছেন। বারামুল্লা থেকে ৩৬৯ জন ও বান্দিপোরা থেকে ১৩৮ জনের ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ কমিশনে দায়ের করা হয়। সরকার ১৮৬ জনের ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছে। রাষ্ট্রসংঘের Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances-এর পক্ষ থেকে ভারতে আসতে চাইলে ভারত সরকার অনুমতি দেয়নি।
জম্মু-কাশ্মীরের সাতটা জেলায় - বারামুল্লা, বান্দিপোরা, কুপওয়ারা, পুঞ্চ, রাজৌরি, শ্রীনগর ও বাদগামে ৭০০০-এরও বেশি গণকবর পাওয়া গেছে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে - Facts Underground and Buried Evidence। ২০১১-এর এপ্রিল এক বিবৃতিতে ২৭৩০টি গণকবরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। কমিশন মৃতদেহগুলোর ফরেন্সিক পরীক্ষা ও ডি-এন-এ পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করে। একটা তদন্ত কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করে। সরকার কোন সুপারিশই কার্যকর করেনি।
২০১৭-তে পুঞ্চ জেলায় ২৭১৭ ও রাজৌরি জেলায় ১৭২৭টি গণকবর পাওয়া যায়। দুই জেলারই ডেপুটি কমিশনাররা স্বীকার করেন যে, ২০৮০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির কবর উদ্ধার হয়েছে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ডি-এন-এ পরীক্ষা, কার্বন ডেটিং ও অন্যান্য ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করে। সরকার এবারও কমিশনের সুপারিশে কর্ণপাত করেনি।
৫ আগস্টের (২০১৯) পর সরকার কাশ্মীরে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। ১২ নভেম্বর শ্রীনগর থেকে বারামুল্লা ও ১৭ নভেম্বর শ্রীনগর থেকে বানিহাল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে ২০১৬-তে ১৩৫ দিন, ২০১৭-তে ২৫ দিন ও ২০১৮-তে ৯২ দিন ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা ঘটনার পর সামরিক কনভয় যাওয়ার সময় রাস্তা দিয়ে অসামরিক যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২ এপ্রিল একটা স্কুলবাসকে সামরিক কনভয় যাওয়ার সময় আটকে দেওয়া হয়। বাসের ছাত্র-ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়। ৩ এপ্রিল এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার, বারামুল্লা থেকে উধমপুর পর্যন্ত জাতীয় সড়ক দিয়ে সামরিক বাহিনীর কনভয় যাবে। ভোর ৪টে থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অসামরিক যানবাহন জাতীয় সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। এই ব্যবস্থা ৩১ মে পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
৫ আগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামা মসজিদ লকডাউন করে দেওয়া হয়। ঈদের দিনে বিভিন্ন মসজিদে বড় সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পর কাশ্মীরের ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাসি চলে। এই তল্লাসি চলাকালীন বাসিন্দাদের মারধোর, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, জিনিসপত্র লুটপাটও চলতে থাকে। এমনকি কুঠার, কোদাল, হাতুড়ি এই সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে চলে যায়। খাদ্যসামগ্রী মাটিতে ফেলে দিয়ে যায়।
দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার পরিগাম অঞ্চলে ১২ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে রাস্তায় নগ্ন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখে। এদের যৌনাঙ্গে শক দেওয়া হয়। তারপর উপুড় অবস্থায় একজনের ওপর একজন এইভাবে বারোজনকে একসাথে শুইয়ে রাখা হয়। তল্লাসি চলাকালীন মেয়েরা বাড়ির মধ্যেই সশস্ত্র বাহিনীর হাতে যৌন হেনস্তার শিকার হন।
২০১০ থেকে কাশ্মীরে পেলেটগান চলছে। ১১ এপ্রিল ১৩ বছর বয়সী ওয়াইস আহমদমীর পেলেটগানের আঘাতে মারা যায়। ১৫ নভেম্বর আহমদ দারের মৃত্যু হয় পেলেটগানের আঘাতে। ৬ আগস্ট আসারার আহমদ খান বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলার সময় পেলেটগানে আহত হন। ৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সি আর পি নির্বিচারে টিয়ার গ্যাস ও পেপার গ্যাস ব্যবহার করে। এর ফলে মানুষের মৃত্যু ঘটে। ৯ আগস্ট ৩৪ বছর বয়সী দুই শিশু সন্তানের মা ফেহমিদা, ১৭ আগস্ট ৫৭ বছর বয়সী মহম্মদ আয়ুব খান ও ২২ আগস্ট ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল গফ্ফর ওয়ানি (১৯ আগস্ট আক্রান্ত হন) সি আর পি-র আক্রমণে মারা যান।
পেলেটগানের আঘাতে অনেকে চোখ হারিয়েছেন। ১৪ বছর বয়সী আসিফ আহমদ প্যারীর একটা চোখ বাদ দিতে হয়েছে। আসিফ ২০ মে পেলেটগানে আহত হয়। সোহান জিৎ নামে এক বিহারী শ্রমিক পেলেটগানে আহত হয়ে দুটি চোখই হারিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ১০ তারিখ জাদিবালে মহরমের বিভিন্ন মিছিলে পেলেটগান ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হয়। এতে ১০০র বেশি লোক আহত হন। ৯ আগস্ট, ৩ অক্টোবর ও ১৫ অক্টোবর ৩ জন পেলেটগানে আহত হন। জুন মাস থেকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী Long Range Acoustic Device (শব্দ কামান) ব্যবহার করছে। এই কামানের শব্দে কানে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়।
ভারতীয় সেনারা যখন তখন যে কোন ব্যক্তিকে তাদের শিবিরে ডেকে পাঠায়। তারপর সেই ব্যক্তির ওপর চলে অত্যাচার। এটা কাশ্মীরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ৫ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার তৌসিফ আহমদকে ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর শিবিরে ডেকে পাঠানো হয়। শিবিরে তাকে নগ্ন করে পেটানো হয় এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। মহম্মদ ইশাক লোন’কে নাগিশরণ-এ ৩৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এ ডেকে পাঠিয়ে নগ্ন করে পেটানো হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে শোপিয়ানে তল্লাসি চালাবার সময় ইমাম মুফতি সিরাজ ও তার শ্বশুর মহম্মদ আসানকে ভারতীয় সেনারা তুলে নিয়ে আসে। সেনাদের অত্যাচারের ফলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
১৯ মার্চ বান্দিপোরার একজন শিক্ষক রিজওয়ান আসাদ পণ্ডিত (২৯) জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের Special Operation Group-এর শিবিরে অত্যাচারের ফলে মারা যান। শ্রীনগরের এই শিবিরটার নাম Air Cargo SOG Camp। এই শিবির থেকে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসাটা এক অভাবনীয় ঘটনা। কুপওয়ারা জেলার বান্দি নন্দপোরার বাসিন্দা রিয়াজ আহমদ তিকরে (৩০) ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যান। পুলিশের দাবি ছিল রিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন। রিয়াজের পরিবারের লোকজন এটা মেনে নেননি। ৭ তারিখে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কোন তদন্তের খবর জানা যায়নি। ২৬ মে বাদগাম জেলার বাসিন্দা ১৪ বছর বয়সী ফাজিল আহমদ মালিককে ২ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর দাহারমুনা শিবিরে লোহার রড ও বন্দুকের বাট দিয়ে পেটানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসার পর মালিক এখন সুস্থ। ১১ আগস্ট শোপিয়ান জেলার বাসিন্দা বসির আহমদ দার ও আরও দুজন ব্যক্তিকে ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর চিলিপোরা শিবিরে অত্যাচার চালানোর সময় লাউড স্পিকারে তাদের চিৎকার শিবিরের আশেপাশের লোকজনদের শোনানো হয়। ৩ ডিসেম্বর পুলওয়ামাতে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির কাছে ঘোরাঘুরি করার অভিযোগে বসির আহমদ গনি নামে এক মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিকে ভারতীয় সেনারা গুলি করে। গুলিতে তিনি আহত হন।
৫ আগস্টের পর ১৪ জন বহিরাগত শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। ১১ জন অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীর গুলিতে মারা যান, ২ জন গ্রেনেড বিস্ফোরণে ও ১ জন গুলি বিনিময়ের মধ্যে পড়ে মারা যান। কোন সশস্ত্র গোষ্ঠী এই হত্যার দায় নেয়নি বা হত্যার দায় স্বীকার করেনি।
জম্মু-কাশ্মীরে এখন ৭,০০,০০০ ভারতীয় সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সেনা (CRPS, BSF, SSB, ও ITBP) অবস্থান করছে। ৫৬৬১৫.৫৪ একর জমি ভারতীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর দখল করে আছে। ১৬ মে জম্মু-কাশ্মীরের Horticulture Produce Marketing Corporation-এর ৭.৫ একর জমি ৪০ বছরের জন্য সি আর পি-কে ইজারা দিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা ৯৯ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
Jammu Kashmir Coalition of Civil Society ও Association of Parents of Disappeared Persons - জম্মু-কাশ্মীরের এই দুটি সংগঠন যৌথভাবে প্রকাশ করে (৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯) Annual Review of Human Rights Situations in Indian Administered Jammu and Kashmir। ১০০ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে ৬৩৫ জনের নামের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে, যাদের ৫ আগস্টের পর জম্মু-কাশ্মীর জননিরাপত্তা আইন, ১৯৭৮-এ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুই
কাশ্মীরে লক ডাউনের বর্ষপূর্তি
কেমন কাটল এই এক বছর কাশ্মীরিদের! কাশ্মীরের এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে The Forum for Human Rights in Jammu Kashmir-এর প্রকাশিত রিপোর্টে – Jammu and Kashmir/ The Impact on Lockdowns on Human Rights/ August 2019 – July 2020।
২০১৯-এর ৫ আগস্টের আগেই কার্ফু, হরতাল, এলাকা জুড়ে সামরিক বাহিনীর তল্লাসি – এই সমস্ত কিছুই কাশ্মীরিদের জীবন-যাপনের অঙ্গ ছিল। কিন্তু ৩৭০ ও ৩৫ক ধারা বাতিলের পর তারা যে জীবনের মুখোমুখি হলেন, তা তাদের হতভম্ব করে দেয়। জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে সার্বিক লক ডাউন। মানুষের জীবন যাপনে এক অচলাবস্থা দেখা দিল। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ কারারুদ্ধ হলেন। মানুষকে শুধু গৃহবন্দী করে রাখা নয়, তারা যাতে ফোনে কথা না বলতে পারেন, সেজন্য সমস্ত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও অচল করে দেওয়া হ’ল। দোকান-বাজার বন্ধ, সমস্ত কর্মস্থল বন্ধ, শিল্প-বাণিজ্য বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ। শুধু বন্ধ নেই, রাজপথ জুড়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ।
বছরের শেষদিকে সাবেকি টেলিফোন (Landline) চালু হলেও মুঠোফোন পরিষেবা (২জি-তে সীমিত) চালু হয় ২০২০-র জানুয়ারিতে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে। এই বছর মে মাসে সুপ্রীম কোর্ট জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে নির্দেশ দেয় যে, ৪জি পরিষেবা আবার চালু করা যায় কিনা, খতিয়ে দেখতে একটা বিশেষ কমিটি তৈরি করতে হবে। সরকার একটা কমিটি তৈরি করে। সরকারের লোকজনেরাই সেই কমিটির সদস্য। এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ২জি পরিষেবাই চালু আছে।
ভারত রাষ্ট্র কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে কোনদিনই আন্তরিকভাবে আগ্রহী নয়। বরাবরই সামরিক শক্তির সাহায্যে নৃশংসভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘোলাজলে মাছ ধরার অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে কিছুটা সত্যতা থাকলেও ভারত সরকারের নীতি কাশ্মীরি জনসাধারণ বিশেষত যুব সম্প্রদায়কে ভারত বিদ্বেষী করে তুলেছে। ২০১৯-এ কাশ্মীরে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১৫২ জন সদস্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হাতে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১২০ জনই স্থানীয় বাসিন্দা।
দীর্ঘস্থায়ী লক ডাউন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, সংবাদ মাধ্যম ও ইন্টারনেট পরিষেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ যুব সম্প্রদায়কে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীরিরা সামরিক বাহিনীর তল্লাশির মুখোমুখি হচ্ছেন। ২০২০-র জুনের গোড়া থেকে মধ্য-জুলাই পর্যন্ত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যেকদিন এলাকা ঘিরে তল্লাশি (Cordon and Search Operation) চালিয়েছে। এই মাত্রাহীন তল্লাশি কাশ্মীরিদের যন্ত্রণা ও কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০১৯-এর ৪ আগস্টের পর ব্যাপক মানুষকে আটক করা হয়। পরে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০২০-এর মার্চ পর্যন্ত ৪৩৭ জন আটক আছেন। এর মধ্যে ৩৮৯ জন জননিরাপত্তা আইনে (১৯৭৮) আটক আছেন। জননিরাপত্তা আইনে কোন ব্যক্তিকে বিনা বিচারে দুই বছর পর্যন্ত আটক করে রাখা যায়। জম্মু কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিয়া আব্দুল কায়ুম জননিরাপত্তা আইনে বন্দী আছেন। গত মে মাসে জম্মু কাশ্মীর হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়। ২০১৯-এর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ জন নাবালককে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৭৫ জনকে জননিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়েছে।
২০১৯-এর ৪ আগস্ট লক ডাউনের সাথে সাথে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। এই ১৪৪ ধারা জারির বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে একটা মামলা দায়ের করা হয়। ২০২০-এর ১০ জানুয়ারী সুপ্রীম কোর্ট তার রায়ে জানায় নির্বিচারে ১৪৪ ধারা জারি করাটা গ্রহণযোগ্য নয়।
২০১৯-এর ১৫ অক্টোবর ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানোর সময় ১৩ জন মহিলাকে আটক করা হয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শান্তি বিঘ্নিত করছিলেন, এই অভিযোগে তাদের প্রত্যেককে ১০,০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড ও ৪০,০০০ টাকার জামিনে ৩০ ঘণ্টার পর ছাড়া পান। তাদের এই মুচলেকাও দিতে হয় যে, ভবিষ্যতে তারা কখনও শান্তি ভঙ্গ করবেন না।
১৯ মে ২০২০, শ্রীনগরের নবকাদাল অঞ্চলের একটা বাড়ি সেনা বাহিনী বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দেয়। তাদের অভিযোগ ওই বাড়িতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন। ৫ জন সাধারণ মানুষ ওই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে ৩ জন পরে হাসপাতালে মারা যান। ১৩ মে একটা চেক পয়েন্টে গাড়ি না থামিয়ে চলে যাবার জন্য পরের চেক পয়েন্টে ২৫ বছর বয়সী পীর মেহরাজুদ্দিন সি-আর-পি’র গুলিতে প্রাণ হারান। গাড়িতে তার সাথে ছিলেন তার কাকা গুলাম শাহ, যিনি জম্মু কাশ্মীর পুলিশের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাবইন্সপেকটর। ৬ মে ৩২ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর ইউসুফ ওয়ানি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে বুলেটে আঘাতে মারা যান।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের রিপোর্টে (১৫ জুন, ২০২০) বলা হয়েছে, ৮ জন শিশু বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে ও ৭ জন পঙ্গু হয়ে গেছে, এদের বয়স ১ থেকে ১৭’র মধ্যে। এই ১৫ জনের ১০ জন আহত বা নিহত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। ৩ জন নিয়ন্ত্রণ রেখার দুপাশে গুলি বিনিময়ের মাঝে পড়ে গিয়ে, ১ জন লস্কর-ই-তৈবার গুলিতে ও বাকি ১ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির গুলিতে। ২০২০-র ৪ থেকে ৬ মে অবন্তীপুরাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও হিজবুল মুজাহিদিনের মধ্যে ৪২ ঘণ্টা ধরে বন্দুকের লড়াই চলে। সশস্ত্র বাহিনী ১৮টা বাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে দেয়। সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা স্থানীয় যুবকদের বিস্ফোরক বসাতে বাধ্য করে। তাদের সামনে রেখেই সশস্ত্র বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িগুলোর মধ্যে ঢোকে।
৭ আগস্ট, ২০১৯ অনাবাসী কাশ্মীরি ব্যবসায়ী মুবিন শাহের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। কারণ তিনি যেসব অকাশ্মীরি মানুষ, সরকার প্রদত্ত ডোমিসাইল সার্টিফিকেটে কাশ্মীরে জমি কিনতে চাইবে তাদের বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন।
সোশাল মিডিয়ায় আরিফা জানের কাহিনী পোস্ট করার জন্য চিত্র-সাংবাদিক মাথরাট জারাকে ১৮ এপ্রিল ২০২০-তে ইউ-এ-পি-এ আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরিফার স্বামী ২০০০ সালে আরিফার সামনেই ভারতীয় সৈন্যদের গুলিতে নিহত হন। আরিফা এখনও গুলির শব্দ শুনতে পান। একটা আতঙ্ক তাকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়।
সি-এ-এ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে কাশ্মীরি ছাত্রী সাফুরা জারগারকে ২০ এপ্রিল ইউ-এ-পি-এ’তে গ্রেপ্তার করা হয়। জারগার গর্ভবতী থাকায় দিল্লি হাইকোর্ট ১৯ জুন তার জামিন মঞ্জুর করে।
৩ জুন ডঃ মুজফ্ফর জান্নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে যাবার পথে সি-আর-পি’র হাতে নিগৃহীত হন। ২৩ মে ডঃ সৈয়দ মকবুল শ্রীনগরে পুলিশের হাতে নিহত হন। জম্মু কাশ্মীরের চিকিৎসকেরা এখন সরকারি গাড়িতে হাসপাতালে যান।
২০১৯-এর আগস্টে লক ডাউনের পর অবসাদ আর উদ্বেগ সাধারণ মানুষকে গ্রাস করতে থাকে। প্রত্যেকেই নিজের জীবিকা ও শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। Kashmir Chamber of Commerce and Industry (KCCI) এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-এর আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন ৪,৯৭,০০০ জন। শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ১৭,৮৭৮.১৮ কোটি টাকা। ২০২০’র জানুয়ারি থেকে জুলাই-এর মধ্যে শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ২২,০০০ কোটি টাকা। ২০১৯-এর আগস্ট থেকে ২০২০’র জুলাই এই এক বছরে শিল্পে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা। কৃষি, ফলচাষ, নির্মাণ শিল্প, হস্তশিল্প, পরিবহণ, পর্যটন – সমস্ত ক্ষেত্রেই সংকট দেখা দিয়েছে। এক বছর ধরে চলা লক ডাউনের (করোনার জন্য লক ডাউন সহ) পাশাপাশি অকাশ্মীরিদের অর্থনীতিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ায় কাশ্মীরিদের শিল্প ব্যবসা আরও সংকটের সম্মুখীন। কাশ্মীর থেকে গোটা ভারতে আপেল রপ্তানি করা হয়। কিন্তু যান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় আপেল রপ্তানি করা যায়নি। পর্যটন শিল্প ধাক্কা খায়। শিল্পের সাথে জড়িত কর্মীরা কাজ হারিয়েছেন। পর্যটক না আসায় হস্তশিল্পও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। KCCI-এর তথ্য অনুযায়ী ট্রাক পরিবহণ ও যাত্রিবাহী বাস পরিবহণ বন্ধ থাকায় ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর এই ৫ মাসে ২২৬৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
লক ডাউনের শিকার সংবাদ মাধ্যমও। আগস্টে লক ডাউন জারি হওয়ায় প্রথম ২ মাস কোনও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি, অনলাইনেও নয়। পরে সংবাদপত্র প্রকাশিত হলেও বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়ে সরকার বিরোধী কোনও লেখা ছাপা হয় না। কয়েকজন সাংবাদিক চাকরিও হারান। সাংবাদিকদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
ভারতে এখন আনলক পর্ব চলছে। কাশ্মীরে ২০১৯-এর ৪ আগস্ট যে লক ডাউন জারি হয়েছিল, তার অবসান কবে হবে সে সম্পর্কে ভারত সরকার নীরব। কাশ্মীরে সামরিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ অব্যাহত। লক ডাউন জারি করে, মানুষকে গৃহবন্দী করে এই প্রতিরোধ আন্দোলন দমন করা যায়নি। ২২ আগস্টের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখছে, ‘এক বছরের বেশি কেটে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের নথিই বলছে, আদৌ সব ঠিক নেই কাশ্মীরে। যতই উপত্যকার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার কথা বলা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা পড়ুক জঙ্গিরা – সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ানো তরুণের সংখ্যা আদৌ কমছে না উপত্যকায়। কেন্দ্রের খাতাই বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৯০ জন তরুণ বিভিন্ন জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে। বাস্তব সংখ্যাটা তার বেশি হওয়ার সম্ভবনাই বেশি, সরকারি কর্তারাই তা মানছেন। নিরাপত্তা বাহিনীকেও এটা উদ্বেগে রেখেছে।
‘আগে পাক জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও তাদের নাশকতার কথা বলা হত। নর্থ ব্লকের এক কর্তাই জানাচ্ছেন, এমনিই দেখা যাচ্ছে, সংঘর্ষে যেসব জঙ্গি মারা পড়ছে তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। ২০২০’র প্রথম ৭ মাসে নিহত ১৩১ জঙ্গির মধ্যে ১২১ জনই ছিল স্থানীয়। বিদেশি মাত্র ১৫ জন। ২০১৯-এ নিহত ১৫২ জন জঙ্গির মধ্যে ১১৯ জনই ছিল কাশ্মীরের।’