সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
বিজেপি পরিচালিত সরকারগুলির ‘বুলডোজার জাস্টিস’-এ নতুন একটি সংযোজন হল এবছর এপ্রিল (২০২৫)’র শেষের দিকে গুজরাতে আহমেদাবাদের চান্দোলা লেকে উচ্ছেদের ঘটনা। চান্দোলা লেকে ৩ হাজার ৫০০ পরিবার এবং ৫০০ ছোট দোকান উচ্ছেদের কবলে পড়েছে। উচ্ছেদ হওয়া মানুষজনের মধ্যে কিছু সংখ্যক দেবীপূজক আদিবাসী, বাকি সকলেই মুসলমান। মুসলিমরা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে গিয়ে ওখানে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাস করছিল। উচ্ছেদের বর্শামুখ ছিল বাঙালি মুসলিমদের দিকে তাক করা; সেটা বোঝা যায় ওখান থেকে একাধিক বাঙালি মুসলিমকে আটক করার ঘটনায়। আটক শুধু আহমেদাবাদ থেকে নয়, সুরাট, বদোদরা, ভাপি ও কুচ-এ অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৬ হাজার বাঙালি মুসলিমকে আটক করা হয়েছিল। কারণ এরা নাকি ‘সন্দেহভাজন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ (Infiltrators/Illegal Migrants)। শেষমেশ অবশ্য চারশো পঞ্চাশজনকে ‘নিশ্চিত অনুপ্রবেশকারী জ্ঞানে’ গ্রেপ্তার করেছে।
গুজরাত সরকার ঐ তথাকথিত অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বললেও আটাত্তরজনকে জাহাজে চড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ লাগোয়া সুন্দরবনে অলক্ষ্যে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বের কোথাও কি কখনো এরকম অভিবাসী প্রত্যর্পণ দেখা গেছে? ক’মাস আগে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের অমানবিক কায়দায় জোর করে বিমানে চড়িয়ে ভারতে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল। তবে যা করেছিল, প্রকাশ্যে করেছিল; আর মোদি প্রশাসন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেল কপটতায়, কিন্তু সবই করল গোপনে।
গুজরাতে অনুপ্রবেশ নিয়ে এই তৎপরতা শুরু পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরেই, এবং গুজরাত সরকার সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন জানিয়েছিল, চান্দোলা লেকে উচ্ছেদ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের হটানো, আর উচ্ছেদের পরে পুলিশ প্রশাসন অনুপ্রবেশের সঙ্গে যোগ করল সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ। ওখানে নাকি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার গোপন কার্যকলাপ চলছিল। যদিও সরকারি মহল থেকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের’ সম্পর্কে চারজন ‘সন্দেহভাজন বাংলাদেশী সন্ত্রাসী’ আটক ভিন্ন আর কোন তথ্য দেয়নি, তবে পহেলগামে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের টিকি না মিললেও দেশের ভিতরে ‘বড়সড় সন্ত্রাসী-চক্রের হদিশ করা’, ব্যাপারটা পহেলগামের ক্ষতের উপশমে সাহায্য করবে বলেই মনে হয়। আর পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়েও দু-কদম বাড়িয়েই থেমে যাওয়ায় মোদিকুলে আফশোস যা-কিছু ছিল, আহমেদাবাদে তা স্খলন করার মওকা মিলে গেছে বটে।
এখন প্রশ্ন হল : চান্দোলা লেকে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হল, নাকি না কেঁচো, না সাপ, আসলে রজ্জুতে সর্প দর্শানো হল? চান্দোলা লেকের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব যাচাই না করে তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে দেওয়া হল কেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে গুজরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হর্ষ সাংভির জবাব ছিল, “এটা কোন মামুলি অভিযান ছিল না। বস্তিগুলিতে আল-কায়েদার কার্যকলাপের খবরের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে এবং এই কারণেই আমরা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মতো লম্বা সময় অপেক্ষা করতে পারিনি।’’ যেখানে পুলিশের কথা অনুসারে জানা যাচ্ছে, উচ্ছেদ অভিযানে নেমে আল-কায়েদার কার্যকলাপের হদিশ মিলেছে, সেখানে মন্ত্রীর কথায় ঢাকঢাক-গুড়গুড় নেই, তিনি বলেই দিয়েছেন, আল-কায়েদার কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
ফলে গুজরাতে এই উচ্ছেদের আসল কারণ এবং গুজরাতের বিভিন্ন জেলায় অনুপ্রবেশের ধুয়ায় ধরপাকড় এক বিপজ্জনক রাষ্ট্রীয় প্রবণতার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয়। তা হল, মুসলমান, অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাসবাদ – তিনটি প্রসঙ্গকে পরস্পরের পরিপূরক হিসাবে দেশবাসীর কাছে উপস্থিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বিজেপি ময়দানে নেমেছে।
মোদি জমানার সোহাগে গড়ে ওঠা ‘বুলডোজার রাজ’, যার বর্শামুখ সর্বদা মুসলিমদের দিকে তাক করা ছিল, এই নিয়ে ইতিমধ্যে উত্তর প্রদেশের যোগী প্রশাসন সবচেয়ে (বদ)নাম কুড়োলেও এর পথপ্রদর্শক আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রশাসন। মুসলিমদের উপর প্রথম বুলডোজার আক্রমণ নামানো হয় আসামের দরং জেলার ধলপুর এলাকায়। সেখানে ২০২১এর ২০ ও ২৩ সেপ্টেম্বর প্রায় ১৩৫০ গরিব বাঙালি মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার অজুহাতে। শুধু এইটুকুতেই তাদের অপকীর্তি ঢাকবার নয় বুঝে স্বয়ং আসামের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে, উচ্ছেদ হওয়া মানুষেরা সবাই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। ‘সেন্টার ফর মাইনোরিটি স্ট্যাডিজ, রিসার্চ অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট ইন আসাম’এর রিপোর্ট থেকে জানা যায়, উচ্ছেদ হওয়া ঐ মানুষজন কেউই অনুপ্রবেশকারী নয়। তথাপি এরকম উচ্ছেদ অব্যাহত ছিল।
অন্যদিকে আসামের দেখানো পথে বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে মুসলিমদের উপর বুলডোজার অভিযান চালানো হয়েছিল। সেসব ক্ষেত্রে নতুন নতুন অভিযোগ আনা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মীয় সমাবেশে পাথর ছোড়া, উস্কানি দেওয়া, ধর্মীয় প্রতিবাদের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ইত্যাকার অভিযোগে বুলডোজার অভিযান সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদীদের ভাষ্যে বলা হয়েছিল ‘শাস্তিমূলক ধ্বংসসাধন’। এমনকি হরিয়ানার নূহ-তে ২০২৩এর ৩১ জুলাই একটি হিন্দু ধর্মীয় শোভাযাত্রা চলাকালীন বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাম্প্রদায়িক হিংসার আবহে হরিয়ানা সরকার নূহ ও গুরুগ্রামে বাঙালি মুসলমান বস্তিগুলিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে আলটপকা দাবি করে, ওরা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী।
বুলডোজার অভিযানের ভয়াবহতা টের পাওয়া যায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি রিপোর্টে চোখ রাখলে। সংস্থাটির রিপোর্ট ‘বুলডোজার ইনজাস্টিস ইন ইণ্ডিয়া’ থেকে জানা যায়, আসাম, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও দিল্লি, এই পাঁচ রাজ্যে ২০২২-এর এপ্রিল থেকে জুন, কেবল এই তিন মাসেই মুসলিমদের বাসগৃহ, দোকান ও ব্যবসায়িক কাঠামো ধ্বংসের অভিযান চালানো হয়েছিল ১২৮ জায়গায়; এগুলির মধ্যে তেষট্টিটি ঘটনায় সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছিল তেত্রিশটি ঘটনায়। ফলে ৬১৬ ব্যক্তি গৃহহীন হয়েছে অথবা তাদের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে। এসময় দিল্লি ছাড়া বাকি রাজ্যগুলিতে ছিল বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার। দিল্লিতে বিজেপির সরকার না থাকলেও মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন তার হাতে ছিল; আর পুলিশ প্রশাসন সব সময়েই কেন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
এদেশে সমাজ-সংস্কৃতির দিক থেকে, রাজনীতির দিক থেকে, রাষ্ট্রের দিক থেকে লাগাতার মুসলিমদের বিরুদ্ধ ও বিপজ্জনক হিসাবে দেখানো হয়েছে। তার তীক্ষ্মতা কতদূর পৌঁছেছে, তা বুঝতে আমরা গত লোকসভা নির্বাচনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুসলিমদের প্রতি একাধিক বিদ্বেষমূলক ভাষণের কথা স্মরণ করতে পারি। মোদি জমানায় মুসলমান সম্প্রদায়কে যতরকমভাবে বদনাম করা দস্তুর -- মুসলিমদের অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো অবাস্তব ও নিকৃষ্ট কথা থেকে অনুপ্রবেশ পর্যন্ত, সবই ছিল তাঁর বক্তব্যে।
এরকমই ধারাবাহিক মুসলমান বিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক বাতাবরণে আনা হল চান্দোলা লেকে মুসলিম সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ। এতদিন ভারতে মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বলতে বোঝা হত বাইরে থেকে দেশের ভিতরে জঙ্গি হামলা এবং ভিন দেশী কোন কোন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মডিউলদের ভারতের কোন কোন জায়গায় আস্তানা গাড়ার ব্যাপার। চান্দোলা লেকে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কি ঐ ধাঁচের, নাকি দেশের ভিতর ঘাঁটি গাড়ার ব্যাপার, সেটা এখনো সরকারী ভাষ্যে পরিষ্কার না হলেও এটা স্পষ্ট যে এই প্রথম মুসলমান অনুপ্রবেশের সঙ্গে মুসলিম সন্ত্রাসবাদকে যুক্ত করা হল। এটা করতে তারা পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলা এবং সারজিক্যাল স্ট্রাইকের প্রতিক্রিয়ার মতো কোন এক উত্তেজনাপূর্ণ দেশভক্তির আবহের অপেক্ষায় ছিল। পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং তার জেরে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের’ আবহ একদমে মুসলমান-অনুপ্রবেশ-সন্ত্রাসবাদের কথা বলার সুযোগ এনে দিল। সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে সিঁদুর রঙে রঞ্জিত উন্মত্ত দেশভক্তির গাঁজলায় মুসলিম সন্ত্রাসবাদের মন্থন করানোর জন্য বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
২
দেশে মুসলিমদের উচ্ছেদের ঘটনায় অনেক জায়গাতেই অনুপ্রবেশকে মূল কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, এবং তা কেবল মুসলমান নয়, বাংলাদেশী মুসলমান। আবার পশ্চিম বঙ্গের বাইরে অনেক জায়গায় ‘বাঙালি মুসলমান’এর ‘মুসলমান’ উহ্য রেখে বাঙালি-বিদ্বেষের রিহার্সাল চলছে। যদিও ভারতে মুসলমান অনুপ্রবেশ মামুলি ব্যাপার, তথাপি ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির প্রয়োজনে এটাকে ইস্যু করা হয়েছে। হিন্দুত্ব শিবিরের এই একঘেয়ে বাগাড়ম্বরের সৌজন্যে ব্যাপারটা বেশ সরল। কিন্তু বাংলাদেশী মুসলমান কেন? পাকিস্তান নিয়ে তাদের এত গুমোর, দেশটিও মুসলমান প্রধান। আহমেদাবাদ, সুরাট, বদোদরা, কি দিল্লি, মুম্বাই থেকে বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান অনেক কাছে। কিন্তু পাকিস্তানি মুসলমান অনুপ্রবেশ নিয়ে সেভাবে কথা নেই। ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ প্রবাদে তুড়ি মেরে ভারতে যত্রতত্র তথাকথিত বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশকারী পাকড়াও চলছে। ব্যাপারটা মোটেই সাদামাটা নয়। এখানে শুধু ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে ‘মুসলমান’ নেই, জাতি হিসাবে ‘বাঙালি’ও আছে। ধর্মীয় বিদ্বেষের নিক্তিতে মুসলমান আর জাতি-বিদ্বেষের নিক্তিতে বাঙালি -- দুইকে মিলিয়ে-মিশিয়ে বিদ্বেষ-বিভাজনের এক কটটেল পলিটিক্স নামিয়েছে হিন্দুত্ব শিবির। এতে ম্যাজিক আছে; ‘হিন্দু খতরেমে হ্যায়’ বলে বাঙালি মুসলিমদের তাক করার মধ্য দিয়ে সূক্ষ্মভাবে জাতি বিদ্বেষকে লালন-পালন করা যায়। হিন্দুত্ব শিবির সেটাই করছে।
এখন হিন্দুত্ব শিবির গুজরাতে উচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে তথাকথিত বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশের সঙ্গে যখন সন্ত্রাসবাদকে যুক্ত করেছে, তখন বুঝতে হবে, এটা তাদের একটা কপট সিদ্ধান্ত। মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার খবর দেখে ব্যাপারটা ঠিকঠাক টের পাওয়া মুশকিল। গুজরাতে চান্দোলা লেকে উচ্ছেদ ও রাজ্যের নানা স্থানে বাঙালি মুসলিমদের ধরপাকড় সম্পর্কে খবর জানতে চেয়ে আমার এক পরিচিত গুজরাত নিবাসী বাঙালির কাছে জানতে পারলাম, গুজরাতে যত্রতত্র বাতাসে গুঞ্জন ভাসছে – এখানে বাঙালিদের ব্যবসা করতে দেওয়া যাবে না। মানেটা কী দাঁড়াল? গুজরাত সরকার নেমেছে বাঙালি মুসলমান উচ্ছেদে এবং তথাকথিত বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশকারী শিকারে, সন্ত্রাসবাদী ছাপও পড়েনি কোন অমুসলিম বাঙালির নামে; আর পাবলিকের কাছে বার্তা পৌঁছচ্ছে সমগ্র বাঙালির বিরোধিতা করার। জটিল সমীকরণ। গুজরাত হল সেই রাজ্য, যেখানে ২০০২ সালে রাজ্য জুড়ে মুসলিমদের উপর গণহত্যা ভারত ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তর পর্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়েছিল। সেই ক্ষত কি শুকিয়ে গেছে? তা যে সম্ভব নয়, বিলকিস বানুর স্বামী ইয়াকুব রসুলের এক ভয়ার্ত কথায় সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। গুজরাত গণহত্যার সময় বিলকিস বানুর উপর গণধর্ষণকারী ও অপরাধীদের সাহায্যকারী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এগারোজনকে সাজার মেয়াদপূর্তির আগেই গুজরাত সরকারের বদন্যতায় ২০২২এর ১৫ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হলে ইয়াকুব রসুলের কাছে সাংবাদিকরা সাজা মকুব সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এসম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছিলেন অন্য কথা, বলেছিলেন “আমাদের এখন কোন ঠিকানা নেই। আমরা লুকিয়ে থাকছি। কারণ তা জানালে আমাদের বাঁচা কঠিন হয়ে পড়বে।’’ এরপর এই কথাই বলতে হয়, সঙ্ঘীকুলের গুরুজি গোলওয়ালকর সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্যে যেমন বলেছিলেন – হয় বশ্যতা মেনে নাও, নচেৎ দেশ থেকে বিদায় হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে জীবন কাটাও -- গুজরাতের মুসলিমদের প্রথম অপশনটাই বেঁচেবর্তে থাকার শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং সেখানে এদিকটা নিয়ে আপাতত হিন্দুত্ব শিবিরের মাথা না ঘামালেও চলবে; এখন বিদ্বেষ-বিভাজনের নতুন ভাষ্য রচনার মরশুম – এখন বাঙালি মুসলমানের বকলমে জাতি-বিদ্বেষ দস্তুর।
হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনে হিন্দুত্ববাদীরা জাতিকে ভাঙতে চায় ধর্মীয় আঙ্গিকে। বাঙালির ক্ষেত্রে এই কাজে ওরা খুবই মনোযোগী। কারণ হিন্দুত্বের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভাবনার বিপরীতে বাঙালির স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে। যেখানে হিন্দুত্বের ধর্মীয় দর্শন হল ব্রাহ্মণ্যবাদ, এবং তার সামাজিক বৈশিষ্ট্য বর্ণবৈষম্য, জন্মান্তরবাদ, অবতারবাদ ও পুরোহিততন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা ও গোঁড়ামিতে আচ্ছন্ন, সেখানে অখণ্ড বাংলায় হিন্দু ধর্ম নৃতাত্ত্বিক ধর্মের (Anthropological Religion) আদিমাবস্থাসুলভ টোটেমবাদ, গাছকে পূর্বপুরুষ বলে বিশ্বাস, যাদু ও ডাইনিতে বিশ্বাস, গাছ ও সর্প পূজা প্রভৃতির বিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ব্রাহ্মণ্য ধর্ম তার মাথায় কখনো চেপে বসতে পারেনি। এদিক থেকে বাঙালি হিন্দুর ধর্ম প্রকৃতপক্ষে লৌকিক ধর্মের আদল পেয়েছে। ফলে অপরাপর ধর্মের উদার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ধারার সঙ্গে আদান-প্রদানে বাঙালির ধর্মাচরণ বিশেষ বাধা হয়নি। অখণ্ড বাংলায় সমদর্শী ধর্মীয় বিচারধারার সুফি মত প্রভাবিত মুসলিম ভাবধারার সঙ্গে হিন্দু ভাবধারার বহুমুখী আদান-প্রদান ঘটেছে সুদূর অতীত থেকেই। ফলে হিন্দুত্বের হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের লাইনে বাঙালি হিন্দু সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি বিরুদ্ধভাব তার জন্মদাগের মতো ব্যাপার। যখন পশ্চিম বঙ্গে ও সর্বভারতীয় স্তরে হিন্দুত্ব শিবির যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি, তখন তারা পশ্চিম বঙ্গের ‘রসুন’ (রবীন্দ্রনাথ-সুকান্ত-নজরুল) সংস্কৃতির নামে বিলাপ করত। সময়ে শক্তি সঞ্চয় করে টক্কর দিতে নেমেছে। এখন রাম নবমী, জয় শ্রীরাম, হনুমান চালিশা, গীতা মাহাত্ম্য ইত্যাকার প্রচার করে তাদের ধর্মীয় রাজনৈতিক আনুগত্যলাভের মহড়া চলছে সম্বৎসর। হিন্দুত্ব ও বাঙলিত্বের এই দ্বৈরথ তো চলছেই, সেইসঙ্গে আছে প্রত্যক্ষ রাজনীতির ব্যাপার।
হিন্দু মেরুকরণের লাইনে ওরা এনআরসি করতে গিয়ে বুঝেছে, এটা সহজ ব্যাপার নয়। আসামে বাঙালির উপর এনআরসির অভিঘাত এবং পশ্চিম বঙ্গে এনআরসির ধর্মীয় বিভাজনের এবং স্থায়ী উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাব্যতা ধর্ম-পরিচিতি ব্যতিরেকে বাঙালির বৃহৎ অংশকে এনআরসির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। সারা দেশে এনআরসি বিরোধিতার শুরু পশ্চিম বঙ্গে। সারা দেশে ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে এনআরসি বিরোধিতায় এগিয়ে ছিল মুসলিমরা, যেমন পশ্চিম বঙ্গে ছিল বাঙালি। ফলে মুসলমান-অনুপ্রবেশ-এনআরসির যোগসূত্রে বাঙালি জাতিসত্তাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদে প্রতিস্থাপিত করার হাতিয়ার ভোঁতা হয়ে পড়ায় নতুন হাতিয়ার জাতি-শত্রুতার পথই বেছে নিয়েছে তারা। সেটা বাংলার ভিতরে প্রাথমিকভাবে হিন্দি-হিন্দু ভাষ্যে লুকানো ছিল, আবার ভিন রাজ্যে কখনো ‘মাছ-ভাত/চিড়ে-গুড় রঙ্গে’ কিছুটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেত। এখন তারা অনেকটা এগিয়েছে, আরোপিত ‘মুসলমান-অনুপ্রবেশ-সন্ত্রাসবাদ’ যোগসূত্রে বাঙালি পরিচিতিকে জুড়ে দেওয়ার মতো জাতি-শত্রুতার নকশা তৈরিতে তাদের কোন দ্বিধা নেই।
অতি সম্প্রতি ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় স্পষ্ট অভিযোগ উঠেছে, আরএসএস বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে হিন্দিভাষী হিন্দু লোকজন এনে মুর্শিদাবাদে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এরই মধ্যে পশ্চিম বঙ্গের শহরতলীর বিজেপি নেতা অর্জুন সিং হুমকি দিলেন -- বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে হিন্দুদের নিয়ে মুর্শিদাবাদ-মালদহে মুসলিমদের নিকাশ করতে একদিনের বেশি সময় লাগবে না। আপাতভাবে বিষয়টি মুসলমান প্রাসঙ্গিক; কিন্তু নিহিতার্থে তা হিন্দি-হিন্দু আগ্রাসনের ইঙ্গিতবাহী। পশ্চিম বঙ্গের ভিতর থেকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টিতে অপারগতা বাঙালির কৃষ্টি-কালচারের সামনে তাদের অসহায়তাকেই দেখিয়ে দেয়; এবং বাংলার বাইরে একাংশে যে বাঙালি বিরোধী বাতাবরণ, সেটাকে পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে প্রসঙ্গিক করে তোলার প্রচেষ্টা, হোক তা আপাত সাম্প্রদায়িকতার বেশে, এটা আদতে বাঙালি জাতি বিরোধী প্রবণতা। উপরন্তু এটা পশ্চিম বঙ্গে বাঙালি-অবাঙালি সমষ্টিগত যাপনের পক্ষে একটি বিপদ সঙ্কেত।
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরে আসামে শুরু হয়েছে বাঙালি পুশ ব্যাক। সেখানে ১৯৫০ সালের আইন ‘দ্য ইমিগ্র্যান্টস (এক্সপালসন্স ফ্রম আসাম) অ্যাক্ট’-কে হাতিয়ার করে খুশিমতো বাঙালিদের, যাদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলিম হলেও হিন্দুও কিছু রয়েছে, ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলে দেগে দিয়ে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। এপর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যক্তিকে বন্দুকের নলের ডগায় রেখে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে দেওয়া হয়েছে। অথচ তাদের অনেকেরই এনআরসিতে নাম রয়েছে; আর এনআরসি-ছুট ব্যক্তিদের এখনই বেনাগরিক বলে দেওয়া যায় না, যখন এক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আসাম সরকারের ক্ষমতার দম্ভ এতদূর যে, স্বয়ং আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, এনআরসি ত্রুটিপূর্ণ; তাই অনুপ্রবেশকারী শনাক্তকরণে এনআরসিতে নাম থাকলেও তার কোন গুরুত্ব নেই। প্রহসন এই যে, আসামে এনআরসি হয়েছে শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে, রাজ্যে রাজ্যপাটে এনআরসিকে একটা শক্ত হাতিয়ার বানিয়েছিল বিজেপি নিজেই এবং এই এনআরসির জন্যই ১৬০২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে বেরিয়ে গেছে।
পশ্চিম বঙ্গের ভিতরে ও বাইরে বাঙালি বিরোধী এই কর্মপন্থার সবচেয়ে বিপজ্জনক রাজনৈতিক অভিমুখ হল এই যে, বাঙালি হিন্দুদের সামনে এক কঠিন শর্ত খাড়া করা হবে – আরএসএস-বিজেপির বাঙালি মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বিরোধী জিগিরে গলা মেলালে তুমি দেশপ্রেমিক, নচেৎ তুমি মুসলিম সন্ত্রাসবাদের প্রচ্ছন্ন মদতদাতা। পশ্চিম বঙ্গে বিড়ম্বিত হিন্দুত্ব শিবিরের কাছে এটা সবখোল চাবির মতো; বাঙালি জাতিসত্তা, বাঙালির সম্প্রদায়গত ও জাতিগত সহাবস্থানের ঐতিহ্য, পশ্চিম বঙ্গে বহুল চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষেতা সবকিছু লোপাট করতে এটাকে তারা শক্ত হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে।
প্রাসঙ্গিকভাবে আমরা মণিপুরের সাম্প্রতিক জাতিগত সহিংসতার কথা স্মরণ করতে পারি। সেখানে একাধিক স্বতন্ত্র জাতিসত্তাগুলি ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে জাতি-শত্রুতার অভিঘাতে। মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু। অন্যদিকে সংখ্যালঘু কুকি, জোমি ও নাগা উপজাতির প্রায় সকলেই খ্রিষ্টান। মেইতেই ও কুকি-জোমি-নাগাদের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব রয়েছে, যার মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই প্রধান। যেসব দ্বন্দ্ব কখনোই বৈরীরূপে দেখা দেয়নি, সেগুলিকেই বিজেপি-আরএসএস উস্কে দিয়ে জাতি-দাঙ্গার আগুন জ্বালিয়েছে, এবং এই সুযোগে মেইতেইদের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে কলকাঠি নাড়ছে। বাঙালির ক্ষেত্রে জাতি-বিদ্বেষের যেমন পন্থা, মণিপুরে এটা ঘটেছে কিছুটা ভিন্নভাবে; হাতিয়ার ভিন্ন বটে, লক্ষ্য কিন্তু একই। সুতরাং জাতি-বিদ্বেষের রাজনীতি যে রূপেই আসুক, সর্বথা তার পরিণাম সংঘাতময়।
ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের সামনে বিদ্বেষ-বিভাজনের রাজনীতির নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হচ্ছে। শুধু ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই’ ধরনের ভাষ্য দিয়ে তার কাউন্টার করা যাবে না। এই বিচারধারার গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই নিশ্চয়। কিন্তু হিন্দুত্ব শিবির তাকে পাশ কাটিয়ে অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাসবাদ, দেশবাসীর নিরাপত্তার প্রশ্নে বিভাজনের নতুন ন্যারেটিভ রচনায় ব্যস্ত, তারা হিন্দু জাতীয়তাবাদের জাঁতাকলে জাতি-উৎকর্ষকে পিষে নিঃশেষ করতে চায়। এসব নিয়ে নতুন ন্যারেটিভ দাঁড় করানো এখন ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের কাছে আশু কর্তব্য।
তথ্যসূত্র :
1. Damayantee Dhar, Gujarat’s Bangladeshi hunt leaves 6000 Indians homeless for a year, The Federal, 15 May 2025; https://thefederal.com/category/states/west/gujarat/alternate-housing-for-ahmedabad-slum-evictees-after-one-year-rs-3-lakh-186911
2. চোখ বেঁধে গুজরাত থেকে সুন্দরবনে পুশ ইন, নির্যাতনের অভিযোগ, Jagonews24.com, ১২ মে ২০২৫; https://www.jaginews24.com/m/country/news/1021246
3. Aizaz Hussain and Chonchui Nagshangva, Opposition lawmakers protest mistreatment of Indian deportees by US, AP News, February 7, 2025; https://apnews.com/article/indian-illegal-immigration-protest-parliament-deportation-trump-90ae7999040196e3ce25dd3fa8e29137
4. Aditi Mukherjee, The Communal Politics of Evictions in Assam : Looking back at Dhalpur, The Wire, Jun 17, 2024; https://m.thewire.in/article/rights/the-communal-politics-of-evictions-in-assam-looking-back-at-dhalpur
5. Violence at Nhu : A Story of Hatred, Intimidation and Gunshots by Hundutva Groups to Stake Communal Violence, ML Upadte, Vol. 26, No. 33, (8-14 August 2023); 0nline available – https://www.cpiml.net/press-statements/2023/08/fact-finding-report-hariana-organised-hatred-intimidation-and-violence-by
6. Amnesty International, Bulldozer Injustice in India, 7 February 2024; https://www.amnesty.org/en/latest/news/2024/02/india-authorities-must-immediately-stop-unjust-targeted-demolition-of-muslims-properties/
7. আর ইশারা নয়, সরাসরি মুসলিমদের নিশানা করেই ভোট প্রচারে মোদী, বিবিসি নিউজ বাংলা, ১ মে ২০২৪; https://www.bbc.com/bengali/articles/cpegzw04v01o
8. আপনজন পত্রিকা, ১৭ অগাস্ট ২০২২
9. শামসুল ইসলাম, আরএসএস : একটি প্রাথমিক পরিচয়, প্রকাশক বুকমার্ক, কলকাতা, পৃঃ ২-৩
10. ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ভারতীয় সমাজ পদ্ধতি, র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন, কলকাতা, পৃঃ ২২৮-২২৯
11. ‘বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লোক ঢুকিয়ে…’, বিতর্কে অর্জুন সিং, জি ২৪ ঘন্টা, ১৩ এপ্রিল ২০২৫; https://zeenews.india.com/bengali/state/bjp-leader-arjun-singh-reacts-on-waqf-protest-in-malda-and-murshidabad_577922.html
12. Tora Agarwala, India intensifies expulsion of suspected foreigners to Bangladesh, Reuters, June 10, 2025; https://www.reuters.com/world/asia-pacific/india-intensifies-expulsion-suspected-foreigners-bangladesh-2025-06-10/
13. Assam will deport ‘foreigners’ even if their names feature in NRC, The Hindu, June 12, 2025; https://www.thehindu.com/news/national/assam/assam-will-deport-foreigners-even-if-their-names-feature-in-nrc-himanta/article69685571.ece
14. Arun Srivastava, BJP’s Inner Rivalry And RSS Bid For Expansion Have Contributed To Manipur Violence, tHe Hills Times, May 11, 2023; https://thehillstimes.in/featured/bjp-inner-rivalry-and-rss-bid-for-expansion-have-contribute-to-manipur-violence