সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
(কালধ্বনি ষড়বিংশ বর্ষ, প্রথম-দ্বিতীয় সংখ্যা, সেপ্টেম্বর, ২০২২ থেকে পুনমুর্দ্রিত)
'দেখেছি একতারা-হাতে চলেছে গানের ধারা বেয়ে’- রবীন্দ্রনাথ
একতারা, দোতারা, সারিন্দা, সারিঙ্গা, খোল, ঢোল, বাঁশি, খমক, মন্দিরা, ঝাঁজ, কাঁসর, ঘণ্টা, মৃদঙ্গ ডুগডুগি, কর্তাল, ঢাক, বিষম ঢাক আরও কত কত সব লোকবাদ্যের আয়োজন-সমাহার বাংলার লোকসংগীতের পরম্পরা জুড়ে। বাদ্যযন্ত্রের তালিকা বেশ অনেকটাই বড়।
বহু লোকবাদ্যযন্ত্র বিলুপ্ত আজ। শোনা যায়, ভাওয়াইয়া গানেই ২২টি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হতো৷ আমাদের শাস্ত্রে পরম্পরাগত এই লোকবাদ্যযন্ত্রগুলির উল্লেখ দেখতে পাই। বিশেষ করে মঙ্গলকাব্যে। আরও দেখতে পাই আমাদের দেশের প্রাচীন মন্দিরগাত্রের ভাস্কর্যে, বাদ্যরত শিল্পীরা। আমরা অনুভব করতে থাকি, আমাদের দেশে লোকবাদ্যের বিপুল সমাহার ও বৈচিত্র্য-কথা।
ঘন তত আনদ্ধ শুষির,
বাদ্য চতুর্বিধ সুরুচির ।।
ভরত মুনি ও প্রাচীন শাস্ত্র আমাদের জানাচ্ছে, বাদ্যযন্ত্র চার ধরনের।
১) তত (Chordophonic or String) - যে বাদ্যযন্ত্র তারের সাহায্যে বা তারের উপর আঘাত করে বাজানো হয়। একতারা, দোতরা, আনন্দলহরী বা গাবগুবা বা খমক, সারিন্দা ইত্যাদি।
২) আনদ্ধ (Membrorophonic or Skin) - যে বাদ্যযন্ত্র চামড়ায় ঢাকা থাকে। আঙুল, কাঠি বা লাঠি দিয়ে আঘাত করে বাজানো হয়। অর্থাৎ শ্রীখোল বা মৃদঙ্গ, ঢাক, ঢোল, কাড়া-নাকাড়া, টিকারা, চাঙ বা চাঙ্গু, ধামসা, বিষম ঢাক এইসব।
৩) শুষির (Aerophonic or Wind) – সেইসব বাদ্যযন্ত্র যা ‘ফুঁ’ দিয়ে বাজানো হয়। শঙ্খ, বাঁশি, দেশি সানাই, বীণ, শিঙ্গা ইত্যাদি।
৪) ঘন (Solid or Idiophonic) বাদ্যযন্ত্র ধাতু দ্বারা নির্মিত। কাঁসা, পিতল, ভরণ ইত্যাদি। যেমন - করতাল বা কর্তাল, ঝাঁঝ, কাঁশি, ঘঙ, নূপুর বা মঞ্জীর, পেটাঘড়ি ও আরো অনেক।
(এখানে শাস্ত্রীয় বা ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্রগুলিকে আলাদা রেখে শুধুমাত্র বাংলার লোকবাদ্যের উদাহরণগুলিরই উল্লেখ করা হল)
দুই
মানবজমিনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা, বিষয়-পরম্পরায় আবহমান কাল টিঁকে থাকা পড়াশোনা, চাষ-বাস, কথকতা-নাচ-গান-বাজনা-নাটক, খাওয়া-দাওয়া, অসুখ-বিসুখ-ওষধি-চিকিৎসা, হাট-বাজার, মেলা-পার্বণ, খেলাধুলা, আচার-আচরণ সবকিছু নিয়েই গড়ে ওঠে লোকসংস্কৃতি। শিকড় তার গ্রামবাংলার মাটিতে। ‘পপুলার কালচার' বা লোকপ্রিয় বিনোদন এখন শহর-মফঃস্বল উপচে টিভি-মোবাইলে গ্রামজীবনের অন্দরে। সংস্কৃতির ‘নগরায়নে’ হারিয়ে যাচ্ছে লোকগানের এলাকাগত ও স্থানিক বৈচিত্র্য।
কবিগান তো হারিয়েই গেলো। উনিশ শতকের শুরুতে কলকাতায় বাবু সম্প্রদায়ের বিনোদনের অন্যতম উপকরণ। শুধু কলকাতা কেন, সেসময় গ্রামগঞ্জ-জমিদারি এলাকায় প্রায় সর্বত্রই কবিগান। কবিগানের নিজস্ব সুর নেই। কীর্তন, খেউড়, পাঁচালি, হাফ আখড়াই, আখড়াই, টপ্পা, তরজার সুরই কবিগানের সুর। দর্শকের সামনে দু'পক্ষের প্রবল লড়াই। শিল্পীদের মুখে মুখে রচিত গান। কবিগানের তরজাও আজ আর দেখতে পাওয়া যায় না৷
বাংলার লোকগানের মতো আধুনিক বিনোদনের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে লোকবাদ্যকেও। অব্যবহৃত হতে হতে কোনো কোনো লোকবাদ্য হারিয়ে যাচ্ছে, কখনও কখনও আবার বাদ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমাদের বাংলার লোকসংগীতে বা সুরে পরম্পরাগত লোকবাদ্যযন্ত্রের পরিবর্তে পশ্চিমী বাদ্য গীটার, ম্যান্ডোলীন, ব্যাঞ্জো ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটে। ব্যবহার কমতে থাকে দোতরার।
সকলেই জানেন দোতরা একটি কাঠ এবং আংশিক চামড়ার ছাউনি দিয়ে আচ্ছাদিত তারের ‘তত’ জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। যন্ত্রটির বিবর্তনের প্রথম ধাপে এল এর ‘কান’গুলোর (কীলক) বদল। কাঠের তৈরী কানের পরিবর্তে স্থান হল গীটারে ব্যবহৃত ধাতব চাবি। পরবর্তী ধাপে দণ্ডের উপর বসল গীটারের মত ‘ফ্রেড'। অবয়ব এবং আকৃতিও বদলে ফেলা হল। গীটারের বাদন শৈলী তথাকথিত দোতরায় জায়গা করে নিল। বদলে গেল আঞ্চলিক ঘরানার বাদন শৈলী। অর্থাৎ কিনা দোতরার যে অবয়ব, আকার বা নির্দিষ্ট আঞ্চলিক বাদন-শৈলীর আর কোন নিদর্শন রইল না। হারিয়ে গেল বাংলার সোঁদা মাটির গন্ধ ভরা সেই আওয়াজ।
আমরা যদি বাংলার ঢোলকে বেছে নিয়ে খানিক আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাই ইদানিং কালে ঢোল তার ‘তাক ডুম তাক ডুম’ বাণী ভুলে কর্ণবিদারক এক বুলি বাজিয়ে ক্ষান্ত দেয়। মোটামুটি সবাই জানেন, একটা গোলাকার গাছের গুঁড়ির কাঠকে দুইদিকে ফাঁপা করে এবং দু’দিকেই ছাগল বা অন্যকোনও প্রাণীর চামড়ার ছাউনি দিয়ে আমাদের ঢোল তৈরি হয়। ঢোল দু হাত দিয়ে বাজানো হয়। এক হাতে থাকে একটি ছোট্ট লাঠি। ছাউনি দুটির টানাগুলো থাকে পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি। যাঁরা এই ঢোল বাজান তাঁদের বলা হয় ঢুলী।
এর বাদনশৈলীও আলাদা। বাংলার কবিগান বা তরজা গান শুনলে এই বাদনশৈলীর নমুনা ভালভাবেই বোঝা যায়। এহেন ঢোল, ইদানীং কালে চামড়ার পরিবর্তে একপ্রকার ‘সিন্থেটিক প্লাষ্টিক' দিয়ে আচ্ছাদিত হচ্ছে। টানাগুলোও চামড়ার বদলে নাইলনের দড়ি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলশ্রুতি, ‘সিন্থেটিক প্লাষ্টিক’-এর মেটালিক আওয়াজের দৌলতে সে আর ‘তাক ডুম তাক ডুম’ বাজে না।
ভাবতে পারি বাঁশির কথা। বাংলায় 'কানু ছাড়া গীত নাই।' সেই কানু কিন্তু বাঁশি বাজিয়েই গান করতেন। সে ছিল বাঁশের তৈরি বাঁশি।
‘আষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশী মধ্য দিয়া ছ্যাঁদা
নাম ধরিয়া বাজে বাঁশী কলঙ্কিনী রাধা
আষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশী জলে ভাইসা যায়
আর বালুচরে ঠেইকা বাঁশী রাধার গুণ গায় ।।'
মোহনের হাতের সেই বাঁশের বাঁশী আজ লুপ্ত হতে চলেছে। এসে গেছে ধাতুর তৈরি বাঁশি। সে বাঁশির জলে ভাসার উপায় নেই। গুণ গাইবার প্রশ্ন তো পরে।
আর সেই ধাতব বাঁশীর সুর শুনে শ্রী রাধিকার যমুনায় জল আনতে যাওয়া কিংবা কদমতলায় কানুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এতই কর্ণবিদারক ধাতব আওয়াজ।
এরপর আরও আছে। কোনও কোনও শিল্পীকে ইদানীং দেখা যাচ্ছে PVC পাইপের তৈরি বাঁশি বাজাতে। কত অসহায় করে তুলছি আপন শ্রবণ-যন্ত্রটি।
একই পরিবর্তন ঘটে চলেছে ঘন (Solid or Idiophonic) বাদ্যযন্ত্রের। করতাল বা কর্তাল, ঝাঁঝ, কাঁশি, ঘঙ, নুপুর বা মঞ্জীর এইসকল বাদ্যযন্ত্রই কাঁশা, পিতল ইত্যাদি ধাতু দিয়ে তৈরি। সাধারণত লোকসংগীতের আনুসাঙ্গিক বাদ্যযন্ত্র হিসেবেই এইগুলির ব্যবহার। ধাতুর তৈরি এই বাদ্যগুলির আওয়াজে আমরা মুগ্ধ হই। অধুনাকালে একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র, যার নাম ‘অক্টোপ্যাড', আমাদের পরম্পরাগত ধাতব ঘুঙ্গুর কিংবা অন্যান্য যন্ত্রের বদলে সর্বঘটে কাঁঠালী কলার মতন ব্যবহার হচ্ছে। তার আওয়াজে ‘…আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা’। কবিগুরুকে প্রণাম, তিনি আজ বেঁচে নেই বলে।
তিন
লোকসঙ্গীতে বেহালার পাশাপাশি সারিন্দার ব্যবহারও ছিল। কালের নিয়মে তা হারিয়ে গেল। সর্বোপরি আকছার ব্যবহার শুরু হল ‘সিন্থেসাইজার' নামক একটি ইলেকট্রনিক্স বাদ্যযন্ত্রের। এটি এমন এক বাদ্যযন্ত্র যা সব ধরনের বাদ্যকরের বাজনা ওই একটি যন্ত্রই বাজিয়ে দিতে পারে। সেইসাথে আস্তে আস্তে জুড়তে লাগলো অক্টোপ্যাড, কাহন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র।
এমন এমন ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট এখন সহজেই পাওয়া যায়, যা দিয়ে বেশ কিছু বাজনা পূর্বেই শব্দ ধারণ করে রেখে বিনা বাজনদারেই বাজিয়ে দেওয়া যায়। সাম্প্রতিককালের বাংলার অনেক সঙ্গীত শিল্পীরাই এই ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নিয়ে ‘শো’ করেন। আর সেই কান-কপাটিতে তালা লাগানো জগঝম্প সহযোগে মাটির সুরের শিল্পীদের গান বলে যে গান পরিবেশিত হয় তাতে আর যাই হোক মাটি সম্পর্কিত গানের সঙ্গে তার যে কোন মিল নেই তা বুঝতে সংগীত প্রেমী না হলেও চলে।
অধুনা কালের শিল্পীরা সব ধরনের গানের সাথে দু-চারখানা লোকগীতিও জনমানসে পরিবেশন করেন। যে পরিবেশনের সাথে ‘লোকসংগীত' বা ‘লোকগীতি’ বা ‘পল্লীগীতি’ গাই বলতে তারা লজ্জা বোধ করেন। তার চাইতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য এবং গর্ব বোধ করেন 'ফোক গাই' বা 'ফোক করি’ বলাতে। আসলে ‘লোকসংগীত’ ‘লোকগীতি’ ‘পল্লীগীতি’ শব্দগুলিও আকাশবাণীর ঘোষণা থেকে নেওয়া।
উত্তরবঙ্গ যদি ভাওয়াইয়ার পীঠস্থান হয়, দক্ষিণবঙ্গ বাউল সাধনার কেন্দ্র৷ বাউল সঙ্গ, বাউল যাপন, বাউল গান, পর্যটকদের টানে বাউলভূমি বীরভূমে। নগর-মফঃস্বলেও বাউলের চাহিদা বেড়েছে, বাউলের দর্শন নয়, হয়ত বা নিছকই হুজুগ বা অবসর বিনোদন, কিন্তু এর অন্তর্নিহিতে রয়েছে বিস্ময় আর ভালোবাসা। নাগরিক উদ্দীপনায় এবং ব্যবসায়িক কারণে ইদানীং বাউলরাও কিছুটা প্রভাবিত হচ্ছেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভাবের পরিবর্তন, এমনকি সুরের মিশেলও তবুও অনেকে সত্যিই বাউল গান ও দর্শনকে আপন করে নিচ্ছেন।
চার
আজ থেকে ৫০০ বছর আগে কিংবা তারও আগে আমাদের এই বাংলায় কি ধরনের লোকবাদ্য প্রচলিত ছিল তা আমরা জানি না। কেবলমাত্র আমাদের পুঁথি, শাস্ত্র, কাব্যগুলিতে উল্লেখ এবং পাহাড়ের গুহায় আঁকা চিত্র কিংবা মন্দির অথবা ঐ ধরনের দেওয়াল-ভাস্কর্য ছাড়া। সেইসব লোকবাদ্যগুলি হয় চিরতরে লুপ্ত হয়ে গেছে অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় ধুঁকছে।বাংলার গ্রাম-গঞ্জে একটু ঘুরলেই লক্ষ্য করা যায় বংশানুক্রমিকভাবে এইসব লোকবাদ্যগুলি যাঁরা তৈরি করতেন, হয় তারা কালের নিয়মে হারিয়ে গেছেন নতুবা অন্য পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন।
বাজনদার শিল্পী বা নতুন বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা না থাকায়, নতুন বাজনাও আর তৈরি হচ্ছে না, সেইসব কারিগরেরা, যাদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা ছিলই, আর এখন তারা সম্ভবত কপাল চাপড়ে গাইছেন :
আরে ও কাঠোল খুটার দোতরা
তুই করলু মোকে
জনমের বাউদিয়া - - -
আধুনিক সময়ে ইলেকট্রনিক্স বাজনার দাপটে আমরা বহু বাজনার কথা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু এও সত্য শব্দ সংযোজন করার বাড়তি আনন্দ সিনথেসাইজারে নেই, যা আছে বাংলার লোকবাদ্যে। তাই আস্তে আস্তে লোকবাদ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে৷ এখন দোতারা, সারেঙ্গী বিক্রি হচ্ছে, যদিও এখন পর্যন্ত মূলত গানের শিক্ষক-ছাত্ররাই কিনছেন এগুলো৷
আমাদের সংস্থা ভ্রমরা (ইন্স্টিটিউট অফ ফোক-কালচার) বিগত ২০১২ সাল থেকে বাংলার পরম্পরাগত লোকবাদ্যের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে চলেছে। প্রায় ৫০ ধরনের লোকবাদ্য তাতে প্রদর্শিত হয়। উদ্দেশ্য, বাংলার মানুষকে তাদের আপন বাদ্যযন্ত্র চেনানো, তাদের নাড়ির টান অনুভব করানো।
আমাদের চেনা এক মানুষের কথা বলে শেষ করি এই নিবন্ধ।
উত্তরবঙ্গের প্রসিদ্ধ শহর শিলিগুড়ি। সেই শহরে জীবন-জীবিকা শিল্পী পরেশ রায়ের। সুখী সংসার-জীবন। আর জীবিকা? শিলিগুড়ি শহরে সাইকেল রিক্সা চালানো। নেশা - কন্ঠে নিয়ে ফেরা উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গান। রিক্সাওয়ালা হলেও, ইনি কিন্তু আকাশবাণী শিলিগুড়ি কেন্দ্রের একজন উঁচু গ্রেডের নিয়মিত ভাওয়াইয়া শিল্পী। রাজবংশী জনগোষ্ঠীর এই শিল্পীর কাছে প্রচুর ছেলেমেয়ে ভাওয়াইয়া গানের তালিমও নেন। খ্যাতনামা এই শিল্পী সারিন্দা/দোতরা বাজিয়ে পরিবেশন করেন ভাওয়াইয়া গান।
এহেন পরেশ রায় বেশ কয়েক বছর আগে একবার কলকাতার এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সারিন্দা বাজিয়ে লোকসংগীত পরিবেশন করছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার একজন বিখ্যাত বেহালা বাদক। বেঁটে-খাটো সারিন্দা যন্ত্রটি দেখে অবাক নয়নে যন্ত্রটির দিকে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আগ্রহ প্রকাশ করলেন যন্ত্রটি নেড়েচেড়ে দেখতে। দেখলেন, মন্তব্য করলেন আমার বাংলার যন্ত্র, আমার শিকড়ের যন্ত্র, যার সাথে আমার নাড়ির যোগ, অথচ আমিই এই যন্ত্রটিকে চিনি না!
শিকড়কে না চিনি তবে তো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ব!