সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সে লোকটা সবুজ স্বপ্নের থেকে জেগে উঠেছিল। তার সদ্য খোলা চোখে সবুজাভ ঘরের দেওয়ালের সবুজ রঙ প্রতিফলিত হচ্ছিল। সে হাত ছড়িয়ে আড়োমোড়া ভেঙে, বিকট শব্দে হাই তুলল এমন, যেন ভিঁত কেঁপে উঠল, যেন কারো মাথার চুল খাড়া হয়ে যাবে, যদিও আর কেউ সেখানে ছিল না। সে পেচ্ছাপ করতে করতে খেয়াল করছিল তার সিগারেটের গন্ধ ছড়ানো মুখটায় বেকারত্বের কালচে ছোপ পড়েছে, গাল আর তিন দিনের বাসি দাড়ির থুতনি টানছিল সবুজ লোকটা, দিনের বেলার খর তাপে ছাদের ট্যাঙ্কের ধাতব পাইপে সেদ্ধ হয়ে সিধে নেমেছে এমন টগবগে গরম জলে মুখে ঝাপটা দিল। তারপর ফ্রিজটা খুলে দু-গ্লাস সবজে দুধ খেল (তার পক্ষে ঠিক স্বাভাবিক নয়)। দুধটুকু এক ঢোকে গলাধঃকরণ করে ভাবছিল, পরদিন এমন করেই এক ঢোকে সবুজ দুধ গেলার খরচ কি করে জোটাবে।
যদিও স্থায়ী ছিল না এই ভাবনা। কয়েক ঘন্টায় কী আর ঘটবে, বরং সে উদ্বিগ্ন ছিল বেশি এই ভেবে যে, সূর্য অস্তাচলের দিকে আর ভূমি ঝলসে যাবে অন্য আগুনে। সে আগত সময়ের মোকাবিলার কথা ভাবছিল।
****
সে লোকটা নীল স্বপ্নের থেকে জেগে উঠেছিল। তার সদ্য খোলা চোখে নীলচে ঘরের দেওয়ালের নীল রঙ প্রতিফলিত হচ্ছিল। সে হাত ছড়িয়ে আড়োমোড়া ভেঙে, বিকট শব্দে হাই তুলল এমন ভাবে যেন ভিত কেঁপে উঠল, যেন কারো মাথার চুল খাড়া হয়ে যাবে, যদিও আর কেউ সেখানে ছিল না। সে পেচ্ছাপ করতে করতে আয়নায় নিজের মুখের দিকে চেয়ে রক্তের নালী আর বিস্ফারিত কৈশিক নাড়ির আরক্ত চোখ দেখে বিষম ঘা খেল, চোখের কোলে কালচে থলথলে ব্যাগস। দিনের বেলার খর তাপে ছাদের ট্যাঙ্কের ধাতব পাইপে সেদ্ধ হয়ে সিধে নেমেছে এমন টগবগে গরম জলে মুখে ঝাপটা দিল, তারপর ফ্রিজটা খুলে দু-গ্লাস নীলচে দুধ খেল (তার পক্ষে ঠিক স্বাভাবিক নয়)। দুধটুকু এক ঢোকে গলাধঃকরণ করে ভাবছিল, পরদিন এমন করেই এক ঢোকে নীল দুধ গেলার খরচ কি করে জোটাবে।
যদিও বেশিক্ষণ ছিলনা এই ভাবনা। সেও আগত সময়ের মোকাবিলার কথা ভাবছিল।
সবুজ লোকটা ধুলোর মধ্য দিয়ে অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের ফুলো ফুলো মুখ আর বেকার যুবক দলের রিফুইজি ক্যাম্পের গলিটা দিয়ে হাঁটছিল। তার গ্রামটা ছিল নদীর ওই পাড়ে, যেন স্বপ্নের এক দৃশ্য, একবারই গেছিল সেখানে, কিন্তু বাপ-ঠাকুর্দারা যেহেতু ক্লান্তিহীনভাবে আর বিশদে বর্ণনা করতো গ্রামখানার, একটা ক্যাম্পের মতো, সে জেনে ফেলেছিল, সেখানের সব কটা বাড়ি আর পাথরের খুঁটিনাটি পরিচয়। ‘ঐটা আমাদের স্বদেশ, আর কখনো ভুলো না তা,’ নির্বাসন, সংহার আর বেইমানি, মানে আরবদের বেইনামির ঘটনা ইনিয়ে বিনিয়ে তারা বলতো তাকে। একদিন সন্ধেবেলা বাবা বলেছিল, ‘আরবরা আমাদের সঙ্গে বেইমানি করেছে, আমাদের যে কি হল, সেসব খোঁজ করার প্রয়োজনই বোধ করেনি, আর এখন পীড়ন করছে, যদি না খুব নিকৃষ্ট হয়, ঐ ইহুদের মতো।’ ওর বন্ধু আর পড়শিদের ছেলেরাও একই জিনিস শুনেছিল।
‘ইয়া ওয়াধানা’ (ওহ কী নিঃসঙ্গ আমরা)। বিপ্লবকে, উম্মাকে (ধর্মের জিগিরে সমগ্র ইসলামী সমাজকে একাট্টা করা), সব কারণ আর শ্রেণি সংগ্রামকে বিদ্রুপ করে আর তিরিশের দশকের লেবাননের জাতীয়তাবাদী নেতা আল-কাত্তুকজি, প্যালেস্তাইনের হামাজদের মিলিটারি দল আল-কাসসাম, জর্ডনের আরব আর্মির প্রথম শহীদ খায়েদ আল-অবেদাত, মুহম্মদ হামাদ আল-হুনাইতি আর সুলাতান আজলউনি, আর হাজারো শহীদ, সংগ্রামী আর মিলিট্যান্টকে, যারা লড়াইয়ের আগুনে ঝলসে অবিনশ্বর হয়েছে, উপহাস করে বিপ্লবী মুলাকাতের কবি, মাহুদ দরবেশ, গেয়েছিলেন এই গান।
কবির হৃদয়বিদারী কান্না ‘ইয়া ওয়াধানা’-র প্রতি সহমত পোষণকারী সবুজ লোকটা, দক্ষিণ বাম কোনো কিছুর তফাৎ না করে, অগুন্তি মুখের সাগরে থুথু ফেলল। ক্লাবহাউসের কাছে পৌছে লোকটা মোকাবিলা করতে বেরোনো প্লাবিত সবুজ মানুষের স্রোতে হারিয়ে গেল।
নীল লোকটা কাছেপিঠের গলি দিয়ে হাঁটছিল, মনে পড়ছিল, দক্ষিণ কি উত্তরের তার শান্ত গ্রামের কথা। বছরে একবার কী দু’বারের বেশি সে যায়নি কোনোদিন সেখানে, আর সেখানে যাওয়াটাও বেশ কঠিন ছিল, কেননা আকাট মনিবটা তাকে কাজের ঘোড়ার মতো তাড়িয়ে বেড়াতো এমনভাবে যে রাতে যখন সে ঘরে পৌঁছাত ততক্ষণে সে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। সে হাড়জিরজিরে বাচ্চাগুলোকে আর তাদের পিছনের কানাগলি দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরোনো বেকার যুবকের ঝাঁকটার দিকে তাকালো। ‘ওরা আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে, দেশের সব সম্পদ লুটেছে’, ঘনিষ্ঠ মোলাকাতে লোকগুলো তাকে বলেছিল, ‘ওদের খিদমত করতে আমরা সরকারি দপ্তরে আর সিকুরিটি ডিপার্টমেন্টে খাটুনি খেটে মরছি, মুখ্যত এই কারণে, যাতে ওরা আরো বিলাস বহুল গাড়ি চড়ে, বাড়ি পায়, আরামে সাঁতার কাটতে পারে পুলে, আরো ভালো বিদ্যে আর কাজের সুযোগ পায়, আচ্ছা আমরা কী এদেশের রেড ইন্ডিয়ান?’ প্রশ্নটা নীল লোকটার মুখে থাপ্পড়ের মতো পড়েছিল।
এটা কোন দেশ? লোকটা ভুলে গেছিল যে তার পূর্বপুরুষেরা নিজেরা ও তাদের সন্তানদের ধনেপ্রাণে বাঁচাতে, উপনিবেশবাদ বর্ডারের সীমারেখা টানার আগে সেখান থেকে পালিয়েছিল। সে ভুলে গেছিল যে তার নিজের ঠাকুর্দা ও তার সঙ্গী সাথীরা ফেরত যাবার হুকুম অস্বীকার করার জন্যে ট্রেঞ্চেই মারা পড়েছিল। আর ষাট বছর পর এখানকার একটা বাগানবাড়ির তলা থেকে খুঁজে পাওয়ার আগ অব্দি তাঁর দেহাবশেষও পাওয়া যায়নি, এখন তাঁদের রক্তের শপথ স্মরণ করে ঠাকুর্দার সমাধিতে গোলাপের আতর ছড়ানো হয় প্রতিদিন।
‘রেড ইন্ডিয়ান’, নীল লোকটা এটার সাক্ষী দিতে পারে, সে ইতিহাসের মুখে থুতু ছেটায় আর এর রক্ত ভেজা অভিশাপ, এই নোংরা ধূলিধূসর গলি আর এর বাসিন্দাদের ধূলিমলিন মুখের মানুষের মধ্যে তারই সমগোত্রের শিশুদের ওপর স্তূপীকৃত অভিশাপ।
ক্লাবহাউসের কাছে পৌছে লোকটা মোকাবিলা করতে বেরোনো প্লাবিত নীল মানুষের স্রোতে হারিয়ে গেল ।
(লাইভ ব্রডকাস্ট)
বাঁশি বাজতেই দুপক্ষের ঢেউ সামনের দিকে এগুতে থাকলো। বাতাস মন্ত্রে আর প্রার্থনা সংগীতে ভরপুর, আর পিছনে, যেন স্বপ্নের মধ্যে তারস্বরে বাজছে, মুহম্মদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা প্রাচীন মক্কার যোদ্ধা নারী হিন্দ-বিন-উদবাহ’এর গাওয়া সেই মেয়েলি লোকগাথা, ‘যদি তোমরা আগুয়ান হও, তবে আমরা আলিঙ্গন করবো, তাকিয়া পেতে দেবো। যদি পালাও তবে ছেড়ে যাবো, আর আমাদের বিচ্ছেদ হবে বরাবরের, শীতল-হৃদয়ে।’
প্রথমদিকে ছিল শুধু জিভে জিভে দাঙ্গা, কিন্তু অচিরেই মুষ্টিগুলো আকাশের দিকে উঠল, প্রতিটা গোষ্ঠীর নিজস্ব নিশান আছে, তাই কাফিয়াগুলোও উড়তে লাগলো। দুটো স্রোতই, সামনের দিকে ঝুঁকে গর্জন করতে করতে এগোতে লাগলো আর যখন দ্বিতীয়বার হুইসেল বেজে উঠল দুপক্ষই টক্কর নিতে শুরু করল একে অপরের আর অস্ত্রশস্ত্র, তরবারি, ধাতব পাইপ, চেন সব ঝলসে উঠল, অচিরেই রক্তের নালা বইতে শুরু করল। দুপক্ষেরই, বুড়ো, ছোকরা এমনকি বাচ্চারাও সশব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ল। রক্তে মিশে গেল রক্ত, আর একটার পর একটা লাশ পড়ল মাটিতে।
একমাত্র তখন, (না, তার আগে নয়) সৈন্যবাহিনী মুখোশ পরে হাতে ঢাল নিয়ে, ডান্ডা নিয়ে, টিয়ার গ্যাস ফাটিয়ে আর গ্রেনেড নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে এল। ডাণ্ডা আর টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে ওরা একটা দাগ টেনে দুটো স্রোতকে বিভাজিত করল আর ধীরে ধীরে সবুজ আর নীল লোকেরা পালাতে শুরু করল - একদল পুবদিকে আর অন্যেরা পশ্চিমে যতক্ষণ না সবকটা চোখের আড়ালে না চলে গেল।
যখন সবুজ আর নীল বাহিনীর লোকেরা নিজের নিজের দলের লাশ ফেরাতে এল, দেখল চারিদিকে শুধু লাশের স্তূপ। তারকা খচিত ইউনিফর্ম পরা বিশাল বপুর লোকটা বুটের ডগা দিয়ে লাশগুলো উল্টেপাল্টে পরীক্ষা করছিল। তারা সব রঙহীন, ওদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই - ধুলোটে ক্লান্ত ম্লান মুখগুলোর, খিদে, লাঞ্ছনা আগ্রাসন আর অবিচারে ভূপতিত মুখগুলোর ।
দুই ভিন্ন স্রোত একে অপেরর লাশ শনাক্ত করার সময় ক্ষমতার রোমাঞ্চে জ্বলজ্বল করা চোখের বিশাল বপুর লোকটা খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছিল।
(সালভাদোর দালির নতুন ছবি)
পাহাড়ের ওপর চৌকোণা কেল্লাটা হল রইসদের জায়গা, ৫২ ইঞ্চি প্লাসমা টিভির পর্দা রিমোট টিপে বন্ধ করতে, গ্লাসগুলো ঠুং ঠাং করছে, কেননা আটটা লোক ‘সহনশীলতা’য় চুমুক দিল।
তীক্ষ্ণ স্বরের ইংরেজি বলা লোকটার এখন এটাই ছিল আসল খেলা, আমরা যেমনটা ওদের শিখিয়েছি খেলতে। আগুন লাগাবার এই আমার ধান্দা যাতে ওরা একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে নিজেদের বলি চড়ায়। দূর থেকে দোলা দেওয়া, এটাই আমার জগতের পন্থা ।
সাতটা মোমের বাতিদান যার হাতে সেই ইহুদি লোকটা বলল, আর এখানে, তোমার প্রজ্জ্বলন থেকে আমার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ শুকনো জঙ্গলে অলক্ষ্যে একদিন ভয়ঙ্কর দাবানল ঘটাবে। এটাই আমার জমিন আর এই বাধ্যকতা উঠে আসছে প্রাচীন পুঁথির গহ্বর থেকে ।
সর্বোচ্চ পদাধিকারী মহামান্য ব্যক্তিটি বলল, তোমাদের জ্বালানোর জন্য এইতো আমার জ্বলন্ত কাঠ মজুত। আমি কেটে টুকরো করে আর বেছে আলাদা আলাদা করে ঢিবি বানাবো কারো কারো নিমিত্তে ততক্ষণ ধরে যতক্ষণ না তারা আমার দোরে এসে হত্যে দেয়। এমনটাই আমার রাজপাট, কাঠের গুদামের মতো।
যে লোকটা দেশ গেছে, সে বলল এখানে তাদের স্মৃতি, রক্ত আর ভূমি। আমি বাঁজা সমভূমির মতো এটাকে সমান করে লেপে দেব যাতে কাঠের টুকরো কিংবা অঙ্গার ছাড়া কিছু না থাকে সেখানে আর ছেঁড়া জামার নিশান উড়বে তার ওপর, বিজয় আর স্বাধীনতার পতাকা। কবরের মতো, এমনটাই আমার রাজত্ব। মেডেল আর বেল্ট শোভিত লোকটা বলল, এই আমার সব অস্ত্র আর এই আমার গাম্বুট পরা পা, কর্তৃত্বের দণ্ড, আর ধাতব রুল আর সুইচ টিপলেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরী এই আমার মস্তিস্ক।
নীল দলের পাণ্ডা বলল, আমি আপনার অনুগত ভৃত্য জাহাপনা, দিবা রাত্রি আপনাদের গুণকীর্তন করি, আমি জ্বলন্ত কাঠের টুকরোগুলো জড়ো করব আমার ব্যাগে আর প্রত্যেক দিন সকালে আপনার দরজায় গিয়ে অর্পণ করব।
সবুজ দলের পাণ্ডা বলল, আমি আপনার অনুগত ভৃত্য জাহাপনা, দিবা রাত্রি আপনাদের গুণকীর্তন করি, আমি জ্বলন্ত কাঠের টুকরোগুলো জড়ো করব আমার ব্যাগে আর প্রত্যেক দিন সকালে আপনার দরজায় গিয়ে অর্পণ করব।
উপসাগরীয় অঞ্চলের একছত্র চালানো সেলফোন কোম্পানির মালিক বলল, এ হল আমার বিস্তর খোলা পকেট, যার ধারটায় আগুনে ঝলসানো কাঠের টুকরোর ওড়া ছাই লেগে আছে। আমার খেলাটা এমনই।
কণ্ঠস্বর চড়ছে, হৈচৈ ফুলেফেঁপে উঠছে, গ্লাসগুলো ঠুং ঠাং করছে ।
সবুজ লোকটা যখন সব দৌড় আর দাঙ্গা থেকে ঊর্দ্ধশ্বাসে ফিরে তার সবুজ ঘরের দরজা খুললো, সে বিস্মিত হয়ে দেখলো নীল লোকটাও ঊর্দ্ধশ্বাসে রাস্তার আড়াআড়ি গিয়ে তার নীল ঘরের দরজা খুললো। নীচের রাস্তার পাশের নর্দমার দুর্গন্ধটা অসহনীয়, আর অস্থিসার বাচ্চা ও বেকার যুবকেদের খিস্তি জানলায় অলক্ষিতভাবে এল,
“মাদারচোদ”
“কুত্তির বাচ্চা”
নীল লোকটা সবুজ লোকটায় মাথায় একটা লোহার রড দিয়ে মারলো, আর সেই মুহূর্তেই সবুজ লোকটা একটা ছোরা বের করে নীল লোকটার গলায় আমূল বসিয়ে দিল। দুটো লোকের দেহ জড়ামড়ি করে যেন একটাই লাশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
যখন ঘর থেকে পচা গন্ধ ছড়াতে লাগলো, পড়শিরা দরজা ভাঙল। ঘরের সর্বত্র হানাহানির চিহ্ন, টেবিল ওলটানো, ডিসগুলো ভাঙা, দেওয়াল বেয়ে গড়িয়ে নামা অস্পষ্ট সবুজ-নীল জমাট রক্তের রেখা। মেঝেতে পড়ে একটা রড ধরা হাতের লাশ, পাশে পড়ে থাকা অন্য লাশটার হাতে ধরা ছোরা। এর আবছায়া চূর্ণিত, ওর মুণ্ডুটা দু-ফাঁক আর নাকের পাশ থেকে ডান চোখের ধার অবধি চেরা আঠালো ক্ষত।
হিসাম বুস্তানি (১৯৭৫- ) জর্ডনের লেখক, কবি, অ্যাক্টিভিস্ট, এ-পর্যন্ত পাঁচটি গল্পের ও কবিতার সংকলন বেরিয়েছে। আরব দুনিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলী তাঁর লেখায় উঠে আসে বারে বারে। বুস্তানির আখ্যানগুলো, নানা লৌকিক উপকথা আর লোকগান ও কবিতার ব্যবহারে ঋদ্ধ, আর সেসব দশকের পর দশক ধরে চলা নির্মম হিংসার পরিবেশ আর উপনিবেশ-উত্তর আরব দুনিয়াকে চেনায় অন্য এক রহস্যময় আলোআঁধারি মিশিয়ে।