সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
আমি একে প্ল্যানডেমিক বলছি এবং না, ‘ল’টি মোটেই উহ্য নেই, বরং আমি যতটা বলতে চাইছি ততটাই উচ্চকিত, স্পষ্ট।
বিগত ছয়মাসকাল যাবৎ কিছু মিথ্যা বা কল্পসত্য ফোঁটায় ফোঁটায় অবিরাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের চেতনায়, কেননা আমরাই আমাদের ভয়কে ওদের সিদ্ধির রসদ বানাতে দিয়েছি। মাদ্রিদে ২৫শে জুলাই একটি সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৪০০’র বেশি কৃতবিদ্য মানুষ, ছিলেন সারা পৃথিবীর চিকিৎসাশাস্ত্রের সঙ্গে পেশাগতভাবে যুক্ত ১০০’র বেশী মানুষ। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ‘Doctors for the Truth’ সংগঠনের ডাক্তাররা। সেখানে তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনায় একটি বিশেষ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন - ‘world dictatorship with a sanitary excuse’, অর্থাৎ স্বাস্থ্যকে শিখণ্ডী খাড়া-করে রচিত বিশ্ব-স্বৈরতন্ত্র। বর্তমানে আমরা এমনই এক স্বৈরতান্ত্রিক বিশ্বের বাসিন্দা।
আপনি নিশ্চয়ই বিস্মিত হচ্ছেন, কিসের তাগিদে এই চিকিৎসা-বিশারদরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা এবং জীবিকার ঝুঁকি নিয়েও প্রকাশ্যে এই দানবীয়তাকে তার প্রকৃত পরিচয়ে, রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য-সাধনের মিথ্যে প্যানডেমিক নামে, অভিহিত করলেন? করলেন, কেননা পুরো মানবজাতির ভাগ্য এখন বিপন্ন, আমরা তাকিয়ে আছি এক অন্ধকার, আশঙ্কাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে। নাটকীয় শোনাচ্ছে কি? আমি নিশ্চিত, আদতে তা নয়।
চলুন একটু সময়পথে পিছিয়ে যাই এবং দেখি ওরা এটা ঘটাল কিভাবে। আপনি নিশ্চই ভাবছেন, ‘ওরা’ কারা? ধৈর্য্য ধরুন, একটু পরেই ওদের পরিচয় দিচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা অনুভব করে আসছি একটা অলক্ষ্য হাতের অস্তিত্ব - প্রতাপশালী, আবছায়া শক্তি যা পর্দার আড়ালে থেকেই পরস্পর-সংবদ্ধ ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তারা অপরিসীম বিত্তশালী এবং শক্তিমান। বিল গেটস, জেফ বেজোস, মুকেশ আম্বানীদের মতো বিত্তশালী নয়, তারা এমন বিত্তশালী যে, আপনি চারপাশে যা কিছু দেখছেন তারই প্রকৃত মালিকানা তাদের।
প্রাককথন
বর্তমান আলোচনার বিষয় তথাকথিত কোভিড-১৯ অতিমারী (Pandemic), তাই আমরা লক্ষ্যস্থির রাখবো সেখানেই। ২০১০ সালে রকেফেলার ফাউণ্ডেশন (Rockefeller Foundation) ‘প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ভবিষ্যত রূপরেখা’ (Scenarios for the Future of Technology and International Development) নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে বিম্বিত ছিল আগামী পৃথিবী কিভাবে প্রভাবিত হতে চলেছে। সেখানে ‘লক স্টেপ’(Lock step) নামে একটি অধ্যায়ে বলা আছে একটি অতিমারী এবং তার ফলে উদ্ভূত এক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার নিয়ন্ত্রিত পৃথিবীর কথা। সে পৃথিবী হবে এক প্রভুত্বকামী নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত, সীমিত উদ্ভাবন-পরিসর সমন্বিত এবং নাগরিকদের উত্তরোত্তর অবদমন হবে তার রাষ্ট্রীয় অবস্থান। আমরা এখন যা দেখছি তার বিশ্লেষণেও এটি ভীতিপ্রদভাবে নিখুঁত।
অবশ্য এমনটাই যে আসতে চলেছে সে সতর্কবার্তাও আমরা পেয়েছিলাম। ১৯৪৯ সালে জর্জ অরওয়েল ‘1984’ নামক তাঁর দিকদর্শী উপন্যাসে আজকের এই অবদমিত পৃথিবীর পূর্বাভাস রেখে গেছেন। পুলিশরাষ্ট্র, ২৪/৭ নজরদারি সবকিছুরই বাস্তবায়ন ঘটে চলেছিল, আমরা বুঝে উঠতে পারিনি শুধু।
কিন্তু এই ওস্তাগরি – আমি এই অভিধা ব্যবহার করছি আরো ভালো কোনও শব্দের অভাবে – যে ব্যাপারে বিস্ময় জাগায় তা হল এর আতঙ্ক তৈরীর ক্ষমতা। এই আতঙ্কই নিশ্চিত করেছে এক অজানা, অদৃশ্য শত্রুর কাছে আমাদের বশ্যতা, যে শত্রুর নিছক অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। গুলির আঘাতে মৃত্যু হবার আগে জন এফ. কেনেডি যে ছায়াবৃত অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন, সে-ই ৯/১১’র পরে পৃথিবীকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল যে ওসামা বিন লাদেন, আফগানিস্তানের কোনো এক গুহায় বসে ছুরি এবং বাক্স-কাটার যন্ত্রধারী আতঙ্কবাদীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন দুটি ড্রোন দিয়ে নিউ ইয়র্ক শহরের বুকে তিনটি টাওয়ার ধ্বংস করতে, আর একটি প্লেনকে পেনসিলভেনিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে একটি মাঠের মধ্যে আছড়ে চুরমার করে দিতে – প্রায় কোনও যন্ত্রাংশ অক্ষত না রেখে – এবং আর একটি প্লেনকে পেন্টাগনের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে দিতে তার দেওয়ালে একটিমাত্র ফুটো করে! বিভিন্ন ঘটনার সাপেক্ষে আমাদের এভাবে প্রতারিত হওয়ার ইতিহাস যতই দীর্ঘ হোক, এবং তার অনুধাবন যতই আকর্ষণীয় হোক, বর্তমান পরিসরে আমি সে-বিবরণে যাচ্ছি না।
২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Contagion’ নামের সিনেমাটি দেখলে মনে হবে গত ছ’মাসের ঘটনাপ্রবাহ দেখছি ঐ ১ ঘন্টা ৪৬ মিনিট সময়কালে। এরপর ২০১৫ সালে অননুকরণীয় বিল গেটস, একজন সফটওয়্যার-নির্মাতা যিনি হঠাৎই এক অগ্রণী প্রতিষেধক-বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন, একটি ‘টেড টক’(Ted Talk)-এ উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে উনি জানিয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে এমন কোনো আসন্ন অতিমারীর মোকাবিলার ব্যাপারে আমরা কেমন প্রস্তুতিহীন হয়ে আছি! আপাতভাবে অসংবদ্ধ এই ঘটনাবলীর অনুসন্ধানে আমি যদি কিছুমাত্র শিখে থাকি তা হল, কাকতালীয় বলে কিছু নেই।
২০১৯-এর ১৮ই অক্টোবর, উহানে যখন মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেমস চলছিল, ‘কাকতালীয়ভাবে’ নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল অতিমারী-অনুরূপ পরিস্থিতির মহড়া (Pandemic simulation)। ইভেন্ট ২০১ নামে অভিহিত এই কর্মসূচীর পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিলেন জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং বিল ও মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। অতিমারীকালে উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলির অনুরূপ-নির্মাণ ও তার পর্যালোচনা ছিল এর উদ্দেশ্য।
জর্জ ওয়েব, একজন তদন্তকারী আমেরিকান সাংবাদিক যাঁর ইউটিউবে অনুগামী-সংখ্যা লক্ষাধিক, দাবী করেছেন, এই নভেল করোনাভাইরাস ইউএস-এর সামরিক পরীক্ষাগারে সৃষ্ট এবং উল্লিখিত গেমস চলাকালীন মাজ বেনাসি নামে এক মিলিটারি সাইক্লিষ্ট এটি চীনে নিয়ে আসেন। এমনকি চৈনিক মিডিয়া ও চীনের সামরিক মুখপাত্ররাও ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে ওয়েব-এর মতকে সমর্থন করে। কিন্তু সম্যকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় বলে এই তত্ত্ব মত নিয়ে আমরা আর এগোবো না, বিশেষত যখন ওয়েব-এর স্বর পুরোপুরিভাবে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে, যেমন ঘটেছে ডক্টর জুডি মাইকোভিৎসের ক্ষেত্রে, যিনি এই ধাপ্পাবাজির চক্রান্ত ফাঁস করতে প্রথম এগিয়ে আসা মানুষদের একজন, এবং সুইস জীববিদ্যাবিশারদ বিডা এম. স্ট্যাডলারের ক্ষেত্রে, যিনি উপসর্গহীন বাহকদের নিয়ে ওঠা ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাচ্ছিল্য করে।
বিনির্মাণের নির্মাণ
নিশ্চিতভাবে স্পষ্ট তথ্য হল, এবছর ১১ই মার্চ যখন বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০০, তখন WHO রোগটিকে অতিমারী ঘোষণা করল। তারপর থেকে অনেক স্বনামধন্য ডাক্তার এবং মেডিক্যাল হুইসলব্লোয়ারস এগিয়ে এসেছেন এই ধাপ্পাবাজির উন্মোচনে। তাঁরা বলেছেন কিভাবে একে একটা মারাত্মক সংক্রামক রোগ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংখ্যাগুলিকে বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। যাদুবলেই যেন-বা পিছনের সারিতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুর অন্যসব কারণগুলিকে, যাদের মধ্যে কিছু এই ‘ঘাতক’ ভাইরাসের থেকে বেশীমাত্রায় হন্তারক। এই প্রসঙ্গে স্মরণীয় যে, Parliamentary Assembly of the Council of Europe (PACE) ২০১০ সালে WHO-ঘোষিত সোয়াইন ফ্লু অতিমারীকে মিথ্যে-অতিমারি আখ্যা দেয় এবং ওই ঘোষণাকে বর্তমান শতকের ব্যাপকতম স্বাস্থ্য-কেলেঙ্কারীগুলির মধ্যে একটি বলে অভিহিত করে। WHO-এর মুন্সটার (জার্মানী)-প্রতিনিধি ডক্টর উলরিখ PACE-এর মতকে সমর্থন করে এই প্রতারণার বিরুদ্ধাচরণ করেন।
এখন আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংখ্যাবিচার সেরে নিই। বর্তমান লেখাটির রচনাকাল অবধি এ বছর সংক্রামক অসুখে মৃত্যু হয়েছে ৭,৮৮২,৭৩৭ জন মানুষের, মরশুমি ফ্লুয়ের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ২৯৬,৩৩৫, HIV/AIDS-এ মৃত্যু ১,০২০,৭৭৬, ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে ৪,৯৮৭,০৬১ জন মানুষের, ম্যালেরিয়ায় ৫৯৬,৬১৫ জনের। কোভিড-১৯ জনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা, খেয়াল করুন, এখনও অবধি ৭২৯,৯৮৭; এবং প্রশ্ন উঠছে রোগনির্ণয়ের পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে, যার ভুয়ো-পজিটিভ (false positive) নিরুপণ-প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে নিখুঁত – ইউএস CDC ওয়েবসাইট স্পষ্ট জানাচ্ছে, একজন কোভিড-১৯ পজিটিভ প্রমাণিত হবার অর্থ এটাও হতে পারে যে, তিনি ঐ গোত্রের ভাইরাসগুলির (যাদের গোত্রনাম করোনাভাইরাস) যে-কোন একটির প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শরীরে ধারণ করছেন। এছাড়াও, এই রোগে প্রাণ-হারানো একটি বড় সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ তাঁদের শরীরে অন্য প্রাণঘাতী অসুখের উপস্থিতি (co-morbidity) কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা স্বচ্ছন্দে এই তথ্যটি উপেক্ষা করলেন যে এই রোগে আক্রান্ত বলে প্রমাণিত ব্যক্তিদের বর্তমান মৃত্যুহার ৫% - লক্ষ্যণীয়ভাবে কম যদি এই বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা হয়, এই তথাকথিত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত বলে নির্ণীত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশের শরীরে পূর্বস্থিত অন্য এক-বা-একাধিক মারণ-রোগের ক্ষয়িষ্ণুতা ছিল; অথবা, যাঁরা আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন তাঁদের ৯৯% সংক্রমণ-চিহ্নহীন, বা মৃদুভাবে সংক্রামিত।
আসলে, আপনার যদি সুনির্দিষ্ট অভিসন্ধি থাকে তাহলে আপনি আখ্যানটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্মাণ করতেও পারবেন। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ওপর বর্ষিত হতে শুরু করলো কিছু শব্দবন্ধ – নিউ নর্মাল, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, বিচ্ছিন্নতা। বলা হলো, সংক্রমণ আটকাতে আমাদের মুখোশ পরা জরুরী। এখানেও, অভিসন্ধিটা ছিল বিভ্রান্তি রোপণ করা। প্রথম পর্যায়ে, সংক্রামক রোগের দক্ষতম বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত ডক্টর আন্থনি ফাউচি বললেন, মুখোশ পরা জরুরী নয়। ধারণাটা পালটে দাঁড়ালো, শ্বাসপরিবাহীযুক্ত এন-৯৫ মাস্ক সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোৎকৃষ্ট অস্ত্র। তারপর আবার উনি বললেন, এই শ্বাসপরিবাহীযুক্ত এন-৯৫ মাস্ক না-পরাই ভালো, কারণ এর কোনো উপযোগিতা নেই। এই অলীক নাট্যরঙ্গে তাঁর পরবর্তী সংযোজন, চোখের মধ্যে দিয়ে ভাইরাসটির প্রবেশ আটকাতে গগলস্ পরা ভালো। অতি-সম্প্রতি CDC (Centres for Disease Control and Prevention) এই সার্কাসে যোগ দিয়ে বলেছে যে সুস্থ, উপসর্গহীন ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ রুগীর সংস্পর্শে এলেও তাদের পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই, যদিও আগে তাদের প্রত্যয় ছিল উপসর্গহীন ব্যক্তিরাও ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। এভাবে চললে অচিরে ভাইরাসটি নিজেই অস্তিত্ব-সংকটে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।
সত্যিটা হল, এমন কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ নেই যার ভিত্তিতে বলা যায় মাস্ক এই ভাইরাসের চলাচল রোধে সক্ষম। পক্ষান্তরে, এর একটানা ব্যবহার উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে বেশী। একই কথা প্রযোজ্য ড্রাকোনিয়ান লকডাউন পদ্ধতি সম্পর্কেও, স্বল্পপুঁজির ব্যবসা তথা সামগ্রিক অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে যার ভূমিকা নগণ্য বললেই চলে। তাই আশ্চর্য্যের কিছু নেই যে কয়েকটি ইওরোপীয় দেশ যেমন সুইডেন – যে-দেশের অগ্রণী ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ, আন্দার্স টেগনেল, বলেছেন মাস্ক বা লকডাউন কোনটারই কোনও উপযোগিতা তাঁর চোখে নেই - ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকার কিছু শহর স্বাভাবিক চলমানতা বজায় রেখেছে; এবং সম্প্রতি লন্ডন, বার্মিংহাম ও বার্লিনে বেশ কয়েক হাজার মানুষ পথে নেমেছিলেন এই ভুয়ো অতিমারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।
কিন্তু অন্য অধিকাংশ দেশেই বিহ্বল, আতঙ্কিত জনগণের বর্তমান যাপন মানে শুধু যা-কিছু বলা হচ্ছে তার নিষ্প্রশ্ন অনুসরণ আর মাস্ক না-পরা মানুষদের সন্দেহ ও বিরূপতার দৃষ্টিতে দেখা। বিভাজন এবং বিজয়ের নীতি মসৃণভাবে প্রশস্ত করে চলেছে এক-বিশ্ব-সরকার গঠনের পথ।
ছায়াবৃত কুশীলবেরা
এখন দেখা যাক ‘ওরা’ কারা। ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি রকেফেলার পরিবারের নাম, যারা আমেরিকার তৈল-ব্যবসায় বিপুল মুনাফা অর্জন করেছে; বলেছি ইওরোপীয়ান-ইহুদি ব্যাঙ্কার রথসচাইল্ড পরিবারের কথা, জনশ্রুতি অনুযায়ী যারা বিশ্বের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রক। আছে আরো কিছু খেলোয়াড়, কোখ ব্রাদার্স (Koch Brothers) এবং জর্জ সরোস, যারা বিপুল রাজনৈতিক প্রতিপত্তির অধিকারী। এরা সবাই অপরিসীম ক্ষমতাশালী ও অমিত বিত্তশালী মানুষ, যারা তাদের আর্থিক মদতপুষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের মাধ্যমে নীতি-নির্ধারণে নিয়ামক ভূমিকা নেন। এছাড়াও আছে তাদের আর্থিক মদতপুষ্ট মিডিয়া হাউসগুলি, যারা তাদের নির্মিত আখ্যানগুলো আমাদের মগজে গেঁথে দিতে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। অবশ্যই অন্যদেরও উপস্থিতি আছে – বৃটিশ রাজপরিবার এবং ভ্যাটিকান দুটি মাত্র উদাহরণ; এবং ইহুদীবিদ্বেষী না-হয়েও বলা যায় একটা ইহুদী প্রভাব এই সমস্ত সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের নেপথ্যে সর্বদাই ক্রিয়াশীল থাকে। সম্প্রতি বেইরুটে যে বিস্ফোরণে প্রায় অর্ধেক শহর ধ্বংস হয়ে গেছে তার তদন্ত এখনো চলছে এবং ইতিমধ্যেই লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল অ্যাওন বলেছেন, ‘বিস্ফোরণের পেছনে রকেট, বোমা বা অন্য কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা যথেষ্ট’। উল্লেখযোগ্য যে, লেবাননের রেসিস্ট্যান্স গোষ্ঠী হেজবুল্লা এবং ইজ্রায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF)-এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের প্রকাশ্য রূপ আমরা শেষ দেখেছি ২০০৬ সালের যুদ্ধ চলাকালীন; এবং লক্ষ্যণীয় যে, ৪ঠা আগস্ট, বেইরুট বিস্ফোরণের সকালে, ইজরায়েলি সংবাদপত্রগুলিতে এক-সুরে বাঁধা শিরোনামগুলির মধ্যে একটি হল “প্রয়োজন হলে, হেজবুল্লা, লেবাননকে খেসারত দিতে হবে” (“If need be, Hezbollah, Lebanon will be made to pay”)
এমনই সব আধিপত্যকামী ভূ-রাজনৈতিক প্রকৌশল ক্রিয়াশীল থাকে এইসব দুনিয়া-কাঁপানো পরিবর্তন রূপায়ণের মধ্যে। বর্তমানে এমনই একটি পরিবর্তনের জায়মান কালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। চলছে সমগ্র বিশ্বের কর্মপদ্ধতির পুনর্বিন্যাস, পরিভাষায় ‘রিবুট’। ওয়র্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রফেসর ক্লাউস শোয়াব-এর মতে, “এই অতিমারী আসলে আমাদের একটি দুর্লভ এবং সীমায়িত পরিসরের আনুকূল্য দিচ্ছে ভাবার, আমাদের জগৎটাকে নতুন করে দেখার ও তার পুনর্বিন্যাসের”(“The pandemic represents a rare but narrow window of opportunity to reflect, re-imagine and reset our world”)। এই দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রপুঞ্জের অ্যাজেন্ডা ২১, যার নবতম সংস্করণ অ্যাজেন্ডা ২০৩০ – এর সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। এই কর্মসূচী প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপুঞ্জের সুস্থায়ী উন্নয়ন (sustainable development)-এর উদ্দেশ্য ও অভিষ্টের নীল নকশা, যা মানবজাতি এবং পৃথিবীর পক্ষে মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ন ক্ষেত্রগুলিতে আগামী দশ বছরে গ্রহণীয় প্রকল্পগুলির স্বরূপ ও অভিমুখ নির্দিষ্ট করে দেবে।
কয়েকজন বলছেন, এই ‘গ্রেট রিসেট’ রূপায়িত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা হ্রাসের এবং কার্বন-নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে। আমরা, যারা এক দশকেরও বেশী সময়-ব্যাপী চলমান এক-বিশ্ব-সরকার কর্মসূচী সম্পর্কে সচেতন, বিশ্বাস করি, উপরের কারণ দুটি ওদের আমাদের ঘাড়ে চেপে বসার প্রেরণা দিলেও, ওদের চূড়ান্ত লক্ষ্য আমাদের জীবনের ওপর সর্বাঙ্গীন নিয়ন্ত্রণ কায়েম। সেইজন্যই এই ভয়ের বেসাতি জারি রাখাটা ওদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্ল্যান্ডেমিক ইতিমধ্যেই সব মহাদেশের বিভিন্ন দেশের প্রতিবাদ মিছিলগুলিকে থামিয়ে দিয়েছে, নাগরিকদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণকে মজবুত করেছে এবং যা-কিছু স্বাধীনতা আমাদের প্রথম থেকে ছিল তা কার্যকরীভাবে বাতিল করে দিয়েছে।
তাহলে করণীয় কি?
শুরু হয়ে গেছে প্রতিষেধক তৈরীর প্রতিযোগিতা। যে গতিতে ভাইরাসটি জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, তা বিচার করলে বোঝাই যায় প্রতিষেধকগুলি ভাইরাস মোকাবিলায় মাস্কের মত কার্যকরী হবে। অবশ্যই প্রতিষেধক নেওয়া বাধ্যতামূলক হবে, কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইমিউনাইজেশন অ্যাজেন্ডা ২০৩০’-এর লক্ষ্যই হল সবাইকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসা। শোনা যাচ্ছে মেডিক্যাল ট্র্যাকিং চিপ ব্যবহারের কথা; চিপ না- হলেও ডিজিটাল হেলথ কার্ড তো হবেই। প্রচুর সংখ্যক মানুষ বাড়িতে থেকে অনলাইনে কাজ করলে ৫জি প্রযুক্তি প্রচলনের সুবিধা হবে, যদিও এই প্রযুক্তির বিকীরণজনিত বিপদের সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্ক চলছে এখনও। কর্মীদের একটা বিশাল অংশ ইতিমধ্যেই বাতিল প্রতিপন্ন, কোম্পানিগুলি উত্তরোত্তর স্বয়ংক্রিয়তা-নির্ভর হয়ে উঠলে আরও কর্মী-ছাঁটাইয়ের অশনিসংকেত স্পষ্ট।
যদি সামাজিক দূরত্বের মন্ত্রগুপ্তি ভুলে মানুষজন আবার কাছাকাছি আসতে শুরু করেন, তাহলে ওরা বর্তমান ভাইরাস এবং অন্য নানা ভাইরাসের একাধিক সংক্রমণ-তরঙ্গ সুনিশ্চিত করবেই যাতে আবার লকডাউন-বিধি চাপিয়ে দেওয়া যায়। সমস্যা, প্রতিক্রিয়া এবং সমাধানের হেগেলীয় ভাষ্যের বর্তমান প্রয়োগ আশ্চর্য্যজনকভাবে সফল হয়েছে। আমরা আত্মসমর্পণ করেছি; এবং এরপর ওরা এমনই অজানা অদেখা কিছুর আতঙ্ক বারংবার আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে থাকবে যতক্ষণ-না আমরা পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করি। আমি ভয় পাই সেই দিনটাকে যেদিন আমার সন্তান ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করবে, ‘তুমি তখন কী করছিলে যখন ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছিল?”
খুব বেশী দেরী হবার আগে আমাদের জেগে উঠতে হবে।
(তথ্যসূত্র সম্বলিত মূল ইংরেজি লেখাটি
কালধ্বনির ওয়েবসাইটে আপলোড করা থাকবে)